বাংলাদেশের রূপপুর পরমাণু কেন্দ্র এবং এ সংক্রান্ত দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠায় চাপে পড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি এবং যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে টিউলিপকে অপসারণ করার আহ্বান জানিয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সদস্য, এমপি এবং প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থ ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী। রোববার লেবার পার্টির অভ্যন্তরীণ আইন পরিস্থিতি বিষয়ক মুখপাত্র ম্যাট ভিকার্স ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি মেইলকে এ প্রসঙ্গে বলেন, “যেহেতু টিউলিপের ব্যক্তিগত লেনদেন সম্পর্কিত কোনো প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না, প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে টিউলিপকে অবিলম্বে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা এবং দুর্নীতিবিরোধী নীতিগত সিদ্ধান্ত থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।”
শিক্ষার্থী-জনতার এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পলায়ন করেন শেখ হাসিনা, যিনি টানা কয়েকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ১৫ বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। তার শাসনামলেই ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে রূপপুর পরমাণু কেন্দ্র চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ৪২ বছর বয়সী টিউলিপ ছিলেন এই চুক্তির একজন মধ্যস্থতাকারী। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোট চার বছর মধ্যস্থতকারী হিসেবে কাজ করেছেন টিউলিপ। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উভয়ই উপস্থিত ছিলেন।
বাজারদরের চেয়ে বেশি খরচের ওই চুক্তির মধ্য দিয়ে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে টিউলিপের পরিবারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন সংস্থা দুদক তদন্ত শুরু করেছে, হাইকোর্টেও শুনানি হয়েছে।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ‘আত্মসাৎকরেছেন, যা ‘পাচার করা হয়েছে’ মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।
যে চাপে টিউলিপ পড়েছেন, দুর্নীতি হলো তার একটি দিক; অপর দিকটি হলো চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রুশ কোম্পানি রোসাটম। ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযান ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেসব শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে ব্রিটেন, সেগুলোর মধ্যে একটি হলো রোসাটমের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা। রাশিয়ার এই সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২৬টি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ব্রিটেনের সাবেক কনজারভেটিভ পার্টির সরকার। লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসার পরও সেসব নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে।
ডেইলি মেইলকে ম্যাট ভিকার্স জানিয়েছেন, ব্রিটেনের একজন এমপি এবং মন্ত্রী হিসেবে টিউলিপের সঙ্গে রোসাটমের সম্পর্ক একেবারেই পছন্দ করছে না লেবার পার্টির একটি অংশ।