ছাত্র-জনতার রক্তের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পালিয়েছে

জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ৫ আগস্ট এদেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষরা অংশ নিয়েছেন। শত শত ছাত্র শ্রমিক জনতা জীবন দিয়েছেন। তাদের রক্তের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকার পালিয়ে গেছে। 

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইসস্টিটিউটে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

ফেডারেশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খানের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব। 

এতে আরও বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী, লস্কর মো. তসলিম, মাস্টার শফিকুল আলম, কবির আহমদ, মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, মনসুর রহমান। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের আমন্ত্রিত নেতৃবৃন্দ। 

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতন্ত্র, জাতীয়বাদের সরকার দেখেছে। কিন্তু এসব সরকার মানুষকে সুখ-শান্তি দিতে পারেনি। মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করে সুফল পাওয়ার আশায়। বিগত যে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা সত্যিকার অর্থে মানুষকে সুখ-শান্তি দিতে পারেনি। মানুষ মুক্ত আকাশ ও স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার পেয়েছে। আগে যে সব অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল সে অধিকার ফিরে পেয়েছে। কিন্তু এখনো অন্যায় প্রতিরোধ করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। জালেম পালিয়েছে কিন্তু জুলুম পালায়নি। জুলুমের অত্যাচারে মানুষ বিভিন্ন জায়গায় এখনো কষ্ট পাচ্ছে। আজকে দেশ একটি সংকটের মধ্য চলছে। এখানে রাষ্ট্রপতি কে হবেন এটা বড় প্রশ্ন নয়।

আজকে সংকট দূর করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের অর্জিত স্বাধীনতা কেউ যাতে আবার কেড়ে নিতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। শ্রমিক কল্যাণের নেতাকর্মীদের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত প্রতিটি জেলা-উপজেলায় পাহারা দিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের ইসলামের পতাকাবাহী একমাত্র শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। এই সংগঠন খেটে খাওয়া মানুষদের আলোর পথ দেখায়। অন্ধকার থেকে দূরে রাখে। মানুষদের শান্তির পথের সন্ধান দেয়। আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন ছাড়া দেশ থেকে বৈষম্য দূর হবে না। বৈষম্য দূর করার জন্য ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে শ্রমজীবী মানুষরা সুখ-শান্তি ফিরে পাবে।

তিনি আরও বলেন, শ্রমিকরা কাজ করে খেতে চায়। শ্রমিকরা সংঘাত চায় না। আমরা শ্রমিক-মালিকের সুসম্পর্ক চাই। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই। তাদের এক হতে হবে। তারা বিবাদে জড়ালে সেখানে উন্নয়ন হবে না। মজুরি নির্ধারণ করে শ্রমিক নিয়োগ করতে হবে।’ কিন্তু আমাদের দেশে শ্রমিক নিয়োগের পূর্বে মজুরি ঠিক করা হয় না। আবার যেভাবে মজুরি ঠিক করা হয় সে অনুযায়ী দেওয়া হয় না। ফলে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কারখানায় হামলা চালায়। আমরা এইরকম পরিবেশ দেখতে চাই না। কারখানা ধ্বংস হলে শ্রমিকদের বেতনভাতা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। 

তিনি বলেন, আমরা চাই শ্রমিকদের অধিকার মালিকরা নিশ্চিত করবেন। তাদের বেতনভাতা সময়মত পরিশোধ করবেন। বকেয়া বেতন দিয়ে দিবেন। মালিকদের বেশি সতর্ক থাকা উচিত। কেননা রাসুল (সা.) বলেছেন, শ্রমিকদের অপরাধ দিনে সত্তরবার ক্ষমা করতে। এর অর্থ হচ্ছে, শ্রমিকরা ভুল করতে পারে। কিন্তু মালিকরা যেনো ভুল না করে। আজকে মালিকরা শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করলে দেশে আর কোনো শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হবে না। শ্রমিকরা সুখে শান্তিতে থাকলে দেশ ভালো থাকবে। শ্রমিকরা অসন্তুষ্ট থাকলে দেশ ভালোভাবে চলতে পারবে না।