দেশের বৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় প্রায় তিন হাজার পদের বিপরীতে বর্তমান জনবল সাড়ে আট শ। একটি ট্রেনের চলাচলের জন্য যা যা অবকাঠামো দরকার তার পুরোটাই মেরামত হয় এই রেলওয়ে কারখানায়। শত বছরের পুরাতন এই কারখানাটি এখন জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে। এদিকে রেলপথ আর নতুন রেল সংযোগ বাড়ায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠা এ কারখানার আধুনিকায়ন জরুরি বলে মত দিয়ে দ্রুত লোকবল নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
নতুন নতুন রেলপথ চালু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ চালুর পর ক্রমশই বড় হচ্ছে দেশের রেল নেটওয়ার্ক। প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে নতুন কোচেরও। দেশের ৪৩ জেলায় বিদ্যমান রেলপথের ঘটা আকস্মিক দুর্ঘটনায় বগি মেরামতেও এসেছে গতি। এসব নিয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কর্মীদের যত ব্যস্ততা।
দেড় শ বছরেরও বেশি সময় ধরে সৈয়দপুরের এই রেলওয়ে কারখানায় চলছে কোচ মেরামত। চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে ৩১৭টি কোচ মেরামত করে চলার উপযোগী করেছে এ রেল কারখানা। জনবল সংকটে ধুঁকতে থাকা কারখানাটি দৈনিক রেলের তিন ইউনিট মেরামত লক্ষ্য নিয়ে কাজ চালু রেখেছে। দীর্ঘদিন জনবল নিয়োগ না হওয়ায় ২৮৫৯ পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত মাত্র ৮৬০ জনবল।
১৮৭০ সালে ১১০ একর জমির ওপর নির্মিত কারখানাটির ২৮টি উপ-কারখানায় তৈরি হয় ট্রেন সংশ্লিষ্ট প্রায় ১ হাজার ২০০ ধরনের যন্ত্রাংশ। এ ছাড়া এখানে তৈরি করা হত কোচ ও ওয়াগন। তবে জনবল সংকটে কমেছে কারখানার উৎপাদন। এমন প্রেক্ষাপটে দেড় দশক ধরে আশ্বাস মিললেও কারখানার আধুনিকায়নে দৃশ্যমান হয়নি তেমন কোনো পদক্ষেপ। তবে নতুন রেলমন্ত্রীর ঘোষণা জনবল নিয়োগ দিয়ে দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ।
সম্প্রতি রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেছেন, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ২৮৫৯ জনবলের বিপরীতে বর্তমানে ৮৬০ জন কর্মরত রয়েছেন। ২৮০০ জনের কাজ তো ৮০০ জন করতে পারে না। এভাবে একটি কারখানা সম্পূর্ণভাবে সচল রাখা সম্ভব না। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের যে যন্ত্রপাতি আছে আরও কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে লোকবল নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে রেলকে উন্নতির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার। এটা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও চান। সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানায় অতীতে রেল সেতুর গার্ডার তৈরি হত। এ ছাড়া পাহাড়তলীতেও হত। এখন অল্প কিছু হয় বাকিটা আমদানি করতে হয় এই দক্ষ জনশক্তির অভাবে। আমরা চাচ্ছি রেলকে স্বাবলম্বী করার জন্য। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রেলকে স্বাবলম্বী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমি ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। উনি অতি দ্রুত লোকবল নিয়োগের ব্যাপারে বলেছেন এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি সমস্যাগুলো সমাধানের। এক দিনে তো সম্ভব হবে না। একটু সময় লাগবে, আমাদেরকে একটু সময় দিতে হবে।
এ ছাড়া রেলের জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও রেললাইনের দু-ধারে গড়ে ওঠা বস্তিবাসীদের নিয়েও পরিকল্পনার কথা জানান নতুন রেলমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, যারা রেলের জমি দখল করে আছেন তারা জানেন যে কাজটা অন্যায়। তাদের বিবেকের দংশনে তাদের দংশিত হওয়া উচিত। রেলের জমি দখল করে যে বসবাস করে সে কি খুব শান্তিতে বসবাস করছে, আমার মনে হয় না। এক ধরনের দুর্বৃত্ত আছে তারা এ কাজ করছে। আমাদের রেলের জন্য যতটুকু প্রয়োজন তা আমরা উচ্ছেদ করবো। এগুলো আর সহ্য করা হবে না। এ ছাড়া এক জমি তিনজনকে লিজ দেওয়ায় রেলের অনেক জমি বেহাত হয়ে গেছে। দুর্বৃত্তরা ভুয়া কাগজ তৈরি করে রেকর্ড করে নিয়েছে। এগুলো আমরা ইতোমধ্যে তালিকা করে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছি।
এদিকে কারখানার ভেতরে ২০ একর জায়গার ওপর কোচ ও ওয়াগন তৈরির জন্য নতুন একটি ক্যারেজ শপ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তবে নতুন রেলমন্ত্রীর আশ্বাস কতটা বাস্তবায়ন হয় সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।