জলবায়ু দুর্যোগ : ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে ক্ষয়ক্ষতি ৩১ হাজার কোটি ডলার

তাপপ্রবাহ, খরা, অতিবর্ষণ, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ও সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য অন্তত ৩১ হাজার কোটি ডলার। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিমা ও পুনর্বিমা সংস্থা সুইস রে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এ তথ্য।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগের বছর ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে ঘটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার ছিল ৬ শতাংশ বেশি। ফলে চলতি বছর ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে গত বছরের চেয়ে অধিক। সুইস রে’র হিসেব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় এ বছর ১৩ হাজার  ৫০০ কোটি ডলার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এই ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে শুধু বিমাকৃত সম্পদকে ধরা হয়েছে। বিমার বাইরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

সুইস রে’র দুর্যোগ ও বিপর্যয় বিভাগের প্রধান বাল্জ গ্রোলিমুন্ড জানান, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশি। যেসব স্থাবর সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেসব পুনঃনির্মাণেও ব্যয়ও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বাল্জ।

ব্যাপক বন্যা

বৈশ্বিক বিভিন্ন জলবায়ু সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সাল ছিল বিশ্বের মানব ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর। চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেমন টানা ও দীর্ঘ তাপপ্রবাহ ও খরা পরিলক্ষিত হয়েছে, তেমনি নানা দেশে হয়েছে বিধ্বংসী ও ব্যাপক বন্যা।

সুইস রে’র রেকর্ড বলছে, বন্যার কারণে চলতি বছর শুধু ইউরোপে ধ্বংস হওয়া সম্পদের আর্থিক মূল্য ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি। চলতি বছর ইউরোপে যেসব বন্যা হয়েছে, সেসবের মধ্যে ঘূর্নিঝড় বরিসের প্রভাবে মধ্য ইউরোপের বন্যা ও সেপ্টেম্বরে স্পেনে বন্যা ছিল সবচেয়ে বিধ্বংসী। স্পেনে বন্যায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২৩০ জন মানুষ।

ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে হেলেন ও মিল্টন নামে বড় দু’টি হারিকেন আঘাত হেনেছে। শুধু এ দু’টি ঝড়ের জেরে দেশটির ধ্বংস হওয়া সম্পদের আর্থিক মূল্য অন্তত ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে যেসব হারিকেন এবং টর্নেডো আঘাত হেনেছে, তাতেও লোকসান হয়েছে শত শত কোটি ডলার।

সামনের দিনগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন বাল্জ গ্রোলিমুন্ড। বিবৃতিতে তিনি বলেন, “প্রাকৃতি দুর্যোগ প্রতিরোধে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হয় এবং জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে যদি বৈশ্বিক তৎপরতায় গতি না আসে, তাহলে সামনের দিনগুলোতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।”