জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে সংহতি সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’ ব্যানারে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা পাঁচ দফা দাবি জানান। তাদের দাবিগুলোর হলো- ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে দ্রুত বের করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা, র্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা, নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তি করাসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের অপরাধের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান, মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে এবং এলিট ফোর্স র্যাবের বিবৃতিতে যা উদঘাটিত হয়েছে তাতে আমার মনে হয় একটি সিস্টেম এটিকে তৈরি করেছে। মাদক ব্যবসা, বিভিন্ন অপকর্মের একটি চক্র এই সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই সিস্টেমের একটি অংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক চর্চার একটি অবাধ ক্ষেত্র তৈরি করতে হলে এই সিস্টেমকে নস্যাৎ করতে হবে। আবাসিক হলের গণরুমগুলো শিক্ষার্থীদের শুধু শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেনি, পাশাপাশি কীভাবে শিক্ষার্থীদের বিকৃত মানসিকতা তৈরি হবে তার উৎপাদন ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আন্দোলন করছে তাদের উদ্দেশ্য একটাই, ধর্ষক মোস্তাফিজুর ও তারা সহায়তাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা। আমরা এর আগেও দেখেছি পত্রিকার শিরোনামে ছাত্রলীগ কর্তৃক নারী নিপীড়নের খবর। এখনও দেখছি। সময় পাল্টেছে কিন্তু শিরোনাম পাল্টায়নি। যারা ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটায় তাদের চরিত্র পাল্টায়নি। ছাত্রলীগে অনেক মেধাবী ও সৎ শিক্ষার্থীরাও আসে বলে আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু সংগঠনটি আজ পর্যন্ত কোনো জনসম্পৃক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছে, বিপদে পড়েছে তাদের পাশে এই সংগঠনের কেউ দাঁড়ায়নি। বরং তারা বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। তারা বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে তাদের সংগঠনকে কলঙ্কিত করছে। এই ক্যাম্পাসে তাদের ইতিহাস ন্যক্কারজনক।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়ার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাফরুহী সাত্তার, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, সিনেট সদস্য ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী কনোজ কান্তি রায়, ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাথি মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রিতম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাবেক সভাপতি নাসিরুদ্দিন প্রিন্স প্রমুখ।