নিজস্ব সংবাদদাতা ; সুবিধাবঞ্চিত নারী, শিশুদের জীবনবদলের লক্ষ্যে কর্মরত বেসরকারি সংস্থা অপরাজেয় বাংলাদেশের সংযোগ প্রকল্পের আওতায় জামালপুর শহরের রানীগঞ্জ যৌনপল্লীতে বসবাসরত নারীদের জন্য দিনব্যাপী চিকিৎসা শিবির পরিচালনা করা হয়েছে। দাতা সংস্থা ইউএন-উইমেন এর অর্থায়নে যৌনপল্লী সংলগ্ন সংযোগ প্রকল্পের জেলা কার্যালয়ে গতকাল ৬ মে এই চিকিৎসা শিবিরের আয়োজন করা হয়।
জামালপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. মোবাশ্বিরা হক রানীগঞ্জ যৌনপল্লীর নারী, পুরুষ ও শিশু রোগীদের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত শোনেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধসেবন ও পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। ডা. মোবাশ্বিরা হককে সহযোগিতা করেন জামালপুর সদরের ইটাইল ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিকুঞ্জ কর্মকার। দিনব্যাপী এই চিকিৎসা শিবিরে ৫৯ জন রোগী দেখা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৬ জন নারী, একজন পুরুষ ও দুই শিশু রয়েছে। চিকিৎসা শিবিরে রোগীদের রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে রক্তচাপ ও ওজন পরিমাপ করে ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার পাশাপাশি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিনামূল্যে কিছু ওষুধও দেওয়া হয়। এছাড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতনতামূলক আলোচনাও করা হয়।
এই চিকিৎসা শিবিরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন অপরাজেয়-বাংলাদেশের সংযোগ প্রকল্পের দু’জন মাঠ কর্মকর্তা রীনা আক্তার ও হাফিজা খাতুন।
ডা. মোবাশ্বিরা হক এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি অপরাজেয়-বাংলাদেশের সংযোগ প্রকল্পের সাথে গত বছরের নভেম্বর মাস থেকেই যুক্ত আছি। যৌনপল্লীর নারীরা আমার কাছে আসেন তাদের নানা রোগের সমস্যা নিয়ে। আমি কথা বলি। ওনাদের কি কি সমস্যা তা শুনে লিখি। ওনাদেরকে পরামর্শটা দিয়ে দেই। ওনাদেরকে তো আর এখানে সবকিছু আর একজন মেডিকেল অফিসারের পক্ষে সম্ভব না। অনেকের বড়কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তখন তাদের কোন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে সেই পরামর্শও দিয়ে দেই। এ পল্লীর অধিকাংশ নারী স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
তিনি অপরাজেয় বাংলাদেশ সংযোগ প্রকল্পের সকল কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। কারণ এই নারীরা আসলে সবক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয়। উনারা ডাক্তার কেন, যেকোন মানুষের কাছে যেতেই একটু কুণ্ঠাবোধ করেন। উনারা আমার কাছে এসে খুব সহজেই সবকিছু সমস্যার কথা বলতে পারেন। নিজেরও অনেক ভালো লাগে যে, উনাদের জন্য আমরা কাজ করতে পারছি। ওনাদের ব্যবহার খুবই ভালো। আজকের এই চিকিৎসা শিবির ছাড়াও প্রতিমাসে আমাদের অফিসে এই যৌনপল্লীর ২০ জন নারীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তারা যে আমাদের সাথে কথা বলতে পারতেছেন। তার রোগের পরিস্থিতিগুলো বলতে পারতেছেন। সেটাই বড় কথা। উনারা অপরাজেয় বাংলার দেওয়া স্বাস্থ্যসেবা যে নিতে পাচ্ছেন, এটা তাদের জন্য একটা বিশাল সুযোগ।
সংযোগ প্রকল্পের সমন্বয়কারী ফারজানা বাশার তন্নী দাতাসংস্থা ইউএন-ওমেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন অধিকার ও সুবিধাবঞ্চিত যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং জীবনমানের উন্নয়নে সংযোগ প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যৌনপল্লীতে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করা দরকার।
সংযোগ প্রকল্পের মাঠ কর্মকর্তা রীনা আক্তার এ প্রতিবেদককে বলেন, রানীগঞ্জ যৌনপল্লীর নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাজেয় বাংলাদেশের সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ২০০ নারীকে পর্যায়ক্রমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। জামালপুরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. মোবাশ্বিরা হক এই নারীদের চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রতিমাসে ২০ জন করে নারীকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শের জন্য। ইতিমধ্যে গত ডিসেম্বর ও চলতি জানুয়ারি মাসে ৪০ জন নারী এই সেবা পেয়েছেন। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
জামালপুরে অপরাজেয়র সংযোগ প্রকল্পের চিকিৎসা শিবির অনুষ্ঠিত
