আসমাউল আসিফ : জামালপুরে বাসে অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিকদের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার এবং বাস, চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের নিরাপত্তার দাবীতে দ্বিতীয় দিনের মত চলছে গণপরিবহন ধর্মঘট। গতকাল সোমবার দুপুর থেকে জামালপুর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটের কারণে বন্ধ রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সকল রুটে দুরপাল্লার বাস চলাচল। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।
গত রবিবার (২ মার্চ) জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর এলাকায় জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঢাকা থেকে জামালপুরগামী রাজিব পরিবহণের একটি বাসের সাথে যাত্রীবাহী ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় ইজিবাইকের চালক ও এক যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার (৩ মার্চ) দুপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যত্রযত্র যাত্রী উঠানামা, বাসের বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যু, যাত্রীদের সাথে বাসের চালক ও শ্রমিকদের খারাপ ব্যবহার বন্ধ, বাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ জামালপুরের বাস সার্ভিস সংস্কারে ৬ দফা দাবীতে এবং রাজিব পরিবহণের সকল বাস সার্ভিস বন্ধের দাবীতে জেলা বাস টার্মিনালের সামনে জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ কর্মসুচি পালন করে। ঘন্টাব্যাপী অবরোধের এক পর্যায়ে বাসের শ্রমিকদের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় মনির (৩২) নামে বাসের এক শ্রমিক আহত হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে প্রশাসনের কাছে জেলার সকল বাস, চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবীতে সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি। প্রায় দুই ঘন্টা অবরোধ, পাল্টা অবরোধ ও উভয় পক্ষের উত্তেজনা শেষে সড়ক অবরোধ থেকে সরে আসে উভয় পক্ষ। কিন্তু রাজধানী ঢাকাসহ সকল রুটে বন্ধ রাখা হয় দুরপাল্লার বাস চলাচল। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি। এদিকে, দুপুরে দাবী আদায়ে জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম ও পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলামের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। এ সময় জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শুভ, জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক শেখ মো: আব্দুস সোবাহানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জামালপুর থেকে সারা দেশে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীরা। যানবাহনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী শরিফুল বলেন, জামালপুর থেকে গাজীপুরে যাব, বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি সব বাস দাড়িয়ে আছে, কিন্তু ধর্মঘটের কারণে বাস ছাড়বে না। এখন পরিবারের লোকজন নিয়ে এত দুরের পথ পাড়ি দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। বাস টার্মিনালে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা কামরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন যাত্রীরা জানান, বাড়ী থেকে বের হয়ে টার্মিনালে এসে দেখি বাস চলছে না, এখন বিকল্প উপায়ে পৌছতে হবে। জামালপুর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শুভ বলেন, বাস চলাচলের জন্য সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বাসে অগ্নিকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা এবং গতকাল এক বাস শ্রমিকের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রশাসেরন কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। আমাদের ধর্মঘট কর্মসুচি চলছে, দাবী মেনে না নেওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। জামালপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো: আতিক জানান, বাস মালিক সমিতি থেকে সড়কে নিরাপত্তার কথা বলা হচ্ছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা দেয়া হচ্ছে। তাদের কিছু দাবী দাওয়া আছে, আবার ছাত্রদেরও কিছু দাবী আছে। প্রশসানের দিক থেকে দুই পক্ষের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
জামালপুরে দ্বিতীয় দিনে গড়াল বাস ধর্মঘট
