জামালপুরে মহাসড়কের সরকারি তালগাছ কর্তন

ফুয়াদ খন্দকার : জামালপুর পৌরসভার হাটচন্দ্রা এলাকায় বাইপাস সড়কে বেআইনিভাবে আটটি তালগাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বদরুদ্দোজা বাদল নামের এক ব্যারিস্টারের বিরুদ্ধে। এই গাছগুলো কাটার জন্য তিনি বন বিভাগ ও সড়ক বিভাগের কোন অনুমতি নেননি। স্থানীয়দের অভিযোগ তিনি একজন আইনজ্ঞ হয়ে এমন বেআইনি কাজ কি করে করলেন। গত বৃহস্পতিবার ২ অক্টোবর সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় গাছের কাটা টুকরো গুলো তার বাড়ির উঠানে পড়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দা জনি জানান, ব্যারিস্টার বাদল সরকারি ৭ থেকে ৮ টি তালগাছ কেটে ফেলেছেন। এই গাছগুলো বজ্রনিরোধক হিসেবে কাজ করতো এবং পরিবেশের উন্নতি সাধন হত। তিনি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই গ্রামের আলফাজ, ফারুকসহ অন্যান্যরা জানান, রাস্তার পাশের সরকারি জায়গায় বেড়ে উঠা তাল গাছগুলো কাটা মোটেও উচিত হয় নাই। সে একজন আইনজীবী ও বুদ্ধিমান লোক হয়ে গাছ কাটা ঠিক হয় নাই। সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা অন্যায় হয়েছে। সে যেই হোক তার শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি কিছু দিন আগে সড়কের পাশে জমি কিনে বাড়ি নির্মানের কাজ শুরু করেন। নির্মানাধীন বাড়ির সামনে সড়কের উপরে বড় একটি সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন “ব্যারিস্টার বাড়ি” মূলত এই সাইনবোর্ডটি দেখতে বিঘœ ঘটে এজন্যই তিনি গাছগুলো কেটে ফেলেছেন। আরো জানা যায়, তাল গাছ কাটায় স্থানীয় দুইজন সাংবাদিক তথ্য নিতে গেলে তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কথা বলতে ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে তিনটি তাল গাছ কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, বাড়িতে গাড়ি প্রবেশ করতে তালগাছগুলো বাধা হয়। তাই তার লেবার গাছ কেটে ফেলেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, তালগাছ কেউ ব্যক্তিগত কারণে কাটতে পারে না। এটি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গাছ কাটা কোন আইনের মধ্যে পড়ে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এবং তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মানববন্ধন থেকে শুরু করে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
গাছ কাটার বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নওয়াজিস রহমান বিশ্বাস বলেন, যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেগুলো সড়ক ও জনপদ বিভাগের রোপিত গাছ। যিনি গাছ কেটেছেন তাকে আমরা জানিয়েছি, তিনি সেখানে গাছ লাগিয়ে দিবেন এই মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন। গাছ কাটা অপরাধ হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এটি অপরাধ হয়েছে। অঙ্গীকারনামা দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিনাত শহীদ পিংকি বলেন, তালগাছ কাটার সংবাদ পেয়ে দ্রুত সেখানে লোক পাঠিয়েছি। গাছগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগের। পরিবেশ রক্ষায় তালগাছ বজ্রনিরোধী হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে ৫ হাজার তাল বীজ রোপন করেছি। ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তালগাছ কাটা নিন্দনীয় কাজ হয়েছে। এটি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ভূমির মালিক সড়ক ও জনপথ বিভাগ হওয়ায় তাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলেছি। এ বিষয়ে সাধারণত মামলা হয়ে থাকে এবং সে অনুযায়ী শাস্তি হয়। সড়ক ও জনপদথ বিভাগ কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা এখনো জানায়নি।
মহাসড়ক আইন অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ সীমানা থেকে ১০ মিটারের মধ্যে বিনা অনুমতিতে স্থাপনা নির্মাণ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এরূপ বেশ কয়েকটি সাইনবোর্ড মহাসড়কের পাশে লাগিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তবে তার বাড়ি নির্মানে এই নির্দেশনা মানা হয়নি বলে জানিয়ে ছেন অনেকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। যেখানে সরকার ও বিভিন্ন পরিবেশবাদীরা সড়ক ও মহাসড়কের পাশে গাছ লাগিয়ে বজ্রপাতের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষায় কাজ করছে। সেখানে এক শ্রেণীর মানুষ নিজের প্রয়োজনে পরিবেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এরাই আজ সমাজ ও পরিবেশের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।