জামালপুর এপির কর্মসূচির গুনগত মান পর্যালোচনা শীর্ষক কর্মশালা

নিজস্ব সংবাদদাতা ; নিজেদের এলাকার উন্নয়ন এবং নারী, শিশুসহ বিপদাপন্ন মানুষের জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তনে এলাকাবাসীর অংশগ্রহণ ও অবদানে ইতিমধ্যেই নানামুখী কাজের ফলাফল লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। দুইদিনব্যাপী কমিউনিটি পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা সভায় সে চিত্র ফোটে উঠেছে। শিশুদের সর্বোত্তম সুরক্ষা এবং অভিনব কাজের প্রতিফলন ঘটেছে এপির কার্যক্রমের মাধ্যমে। বিপদাপন্ন শিশুদের প্রতিগুরুত্বারোপ, সহনশীলতা, নিজস্বতা বোধ তৈরি, সবুজ বিদ্যালয়, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্ব্যসম্মত এবং পরিবেশবান্ধব গ্রাম গঠনের কার্যক্রম, শিশু, কিশোরদের মাধ্যমে সৃষ্টিশীল কাজের উদ্যোগ গ্রহণ, গণজাগরণমূলক বিভিন্ন প্রচারণা, স্পন্সরশিপ, কারিগরী দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্য সরবরাহ, নেটওয়ার্কিং, অ্যাডভোকেসি, সামাজিক সংহতি, বাল্যবিয়েমুক্ত গ্রাম প্রতিষ্ঠা, জেন্ডার সমতা, কৃষি উৎপাদনে আধুনিকায়ন, পুষ্টি উন্নয়নে নানামূখী উদ্যোগ, ফাইভ জিরো প্লাসসহ বহুমাত্রিক কাজের সমাহার ঘটেছে এপির কর্মএলাকায়।
পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা সভাকক্ষটিতে থরে থরে সাজানো উল্লেখিত কার্যক্রমের প্রতিবেদন, ছবি থেকে ধারণা স্পষ্ট হয়েছে। গত ১৬ নভেম্বর জামালপুরে এরিয়া প্রোগ্রাম (এপি) এর উদ্যোগে দুইদিনব্যাপী কমিউনিটি বার্ষিক পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা সভা উদ্বোধন করেন জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্নাত শহীদ পিংকী। এতে সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম। উদ্বোধনী সভায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন প্রমুখ।
মুখ্য আলোচক ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের জামালপুর এপির কমিউনিটি এনগেজমেন্ট এন্ড পার্টনারশিপ কোঅর্ডিনেটর সত্যভ্রত সাহা, জামালপুর এপির ভারপ্রাপ্ত প্রোগ্রাম ম্যানেজার উজ্জ্বল পেট্রিক কোরাইয়া, উন্নয়ন সংঘের এপি ম্যানেজার মিনারা পারভীন।
১৭ নভেম্বর সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে আলোচনায় অংশ নেন উন্নয়ন সংঘের নির্বাহী পরিচালক রফিকুল আলম মোল্লা, পরিচালক কর্মসূচি মুর্শেদ ইকবাল, অপরাজেয় বাংলাদেশের সেন্টার ম্যানেজার আশরাফুল আলম , শিশু প্রতিনিধি অর্পা প্রমুখ।
দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, সমাজসেবা, সমবায়, যুব উন্নয়ন, শিক্ষা বিভাগ, জনপ্রতিনিধি, গ্রাম ও নগর উন্নয়ন কমিটি, শিশু ফোরাম, বিভিন্ন সমমনা এনজিও প্রতিনিধি, এপির কর্মীবৃন্দসহ মোট ৭৫ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।
জামালপুর সুইড প্রতিবন্ধী অটিস্টিক বিদ্যালয়ের হলরুমে অনুষ্ঠিত সভাটি উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
সভা সূত্রে জানা যায়, এপি কার্যক্রমের সহায়তায় গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সদস্যরা নিজ নিজ এলকার মানচিত্র তৈরির পাশাপাশি, বিভিন্ন সম্পদ, প্রতিষ্ঠান, জনসংখ্যা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে। যা এ সভায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি এলাকার প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ভিডিসির সদস্যরা স্বপ্নের একটি গ্রামের চিত্র তৈরি করে। এসব বিষয় নিয়ে দুদিনের সভায় কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যালোচনা শেষে এক বছরের জন্য একটি লাগসই কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়।
শিশুদের মৌলিক চাহিদা পুরণের জন্যে খানার স্থায়ী আয়ের উৎসে সহযোগিতা, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, ওয়াস, শিশু সুরক্ষা এবং অংশগ্রহণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের অবস্থা উন্নতির লক্ষ্যে জামালপুরে বাস্তবায়ন হচ্ছে এরিয়া প্রোগ্রাম (এপি) নামে ১০ বছর মেয়াদী কর্মসূচি। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সংঘ জামালপুরে এপি বাস্তবায়ন করছে।
সূত্র জানায়, এরিয়া প্রোগ্রামটি জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর, শরিফপুর ইউনিয়ন এবং জামালপুর পৌরসভার ১, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বাস্তবায়ন ২০২১ সাল থেকে করে আসছে। চলতি বছর থেকে জামালপুর সদর উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে এবং পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এর জন্যে ইতিমধ্যে লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে । কার্যক্রমের মধ্যে জীবিকায়ন, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, ওয়াস এবং স্পন্সরশীপ অন্যতম। এরমধ্যে আবার দক্ষতা উন্নয়ন, পরিবেশ সম্মত গ্রাম প্রতিষ্ঠা, জিঙ্ক ধান উৎপাদন, অতিদারিদ্রের উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দল গঠন, সক্ষমতার বিকাশ ঘটানো, প্রসবপূর্ব ও প্রসব পরবর্তী সেবা, শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, বিপদাপন্ন শিশুর তালিকা তৈরিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে হংকং এবং মালয়েশিয়া।