আসমাউল আসিফ : বাউল সাধক লালন ফকিরের দর্শন, চিন্তা, কর্ম ও গানকে বিকশিত করার প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠিত জামালপুর লালন একাডেমীর নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বুধবার ১৯ ফেব্র“য়ারী সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীর বীর মুক্তিযোদ্ধা গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও বাউল সন্ধ্যার আয়োজন করে জামালপুর লালন একাডেমী। সমাজ সংস্কারক ও মানবতাবাদী দার্শনিক লালনকে নিয়ে আলোচনা সভায় জামালপুর লালন একাডেমীর সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। এছাড়াও অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে কেন্দ্রীয় বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো: ওয়ারেছ আলী মামুন, বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আলোচক হিসেবে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনোয়ার হুসেন বক্তব্য রাখেন। এ সময় বক্তরা বলেন, লালনের দর্শন ও জীবনবোধ সবাইকে একই শিক্ষা দেয়, তিনি কেবল একজন বাউল গায়ক বা সাধক নন, সমাজ সংস্কারক ও মানবতাবাদী দার্শনিক হিসেবেও লালনের খ্যাতি রয়েছে। লালন ফকির তার গভীর দর্শন দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করেছেন। তার গানে মানুষের মুক্তির কথা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগত বিভেদের ঊর্ধ্বে মানবতাকেই সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারা থেকে তিনি তার গানগুলো রচনা করেছেন, যার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সাম্য প্রতিষ্ঠার বার্তা ছড়িয়েছেন। ব্রিটিশ শাসনামলে যখন হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ বাড়ছিল, লালন তখন এর তীব্র বিরোধী ছিলেন। তিনি সবসময় মানুষে-মানুষে বিভাজন অস্বীকার করে ঐক্যের কথা বলতেন। লালন তার জীবদ্দশায় প্রায় দুই হাজার গান রচনা করেছেন। লালন ফকিরের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তার গানের গভীর ভাব ও ভাষা আজও মানুষের মনে অটুট আবেদন ধরে রেখেছে। লালন মানুষকে জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে পরিচয় দিয়েছেন। তাই তার মৃত্যুর শত বছর পরেও লালন গান আজও প্রাসঙ্গিক। কেননা মানব পরিচয়ে লালনের জীবনদর্শন সত্যিই সর্বকালে সত্য। বৌদ্ধ সহজিয়া, সুফিবাদী চিন্তা ও বৈষ্ণব মতের যে মিথস্ক্রিয়ায় বাউল চিন্তা গড়ে উঠে তা সমাজদেহে একটি শক্তিশালী মতাদর্শ নির্মাণ করে, লালন তা ধারণ করেছিলেন। তিনি বাউল চিন্তার আলোকে জাত-পাত, ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানবতার জয়গান গেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন লোক দার্শনিক। আলোচনা সভা শেষে জামালপুর লালন একাডেমীর দুই বছর মেয়াদী নতুন কাযনির্বাহী পরিষদ ঘোষণা করা হয়। অ্যাডভোকেট মো: নুরুল আমিনকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্যরা হলেন- সিনিয়র সহ সভাপতি মো: এনামুল হক, সহ সভাপতি যথাক্রমে অ্যাডভোকেট শাহ আলম, শেখ সৈয়দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে মো: রায়হান বাদশা, অ্যাডভোকেট মাসুম ফৌরদৌস জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল হক জুয়েল, কোষাধ্যক্ষ আসমাউল আসিফ, দপ্তর সম্পাদক আল-আমিন অর্নব, প্রচার সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রনি, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আফরিন জিন্নাত নিসা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো: মজিবুর রহমান মুজিব, কার্যনির্বাহী সদস্য যথাক্রমে অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, একেএম আশরাফুজ্জামান স্বাধীন, সাইমুর রসি, মো: মাসুদ রানা, স্বপন বিশ^াস, সাগর মূখার্র্জী, আনিছুর রহমান ফকির, জাকারিয়া ইসলাম মুকুল। পরে কুষ্টিয়া বাউল সংঘ ও জামালপুর লালন একাডেমীর শিল্পীবৃন্দ লালনের গান পরিবেশন করেন। ‘ধন্য ধন্য বলি তারে, সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে, চাতক বাঁচে কেমনে মেঘের বরিষন বিনে, না জানি ভাব নদীর কেমনো ধারা, ডুবাইলেও ভাসাইতে পারো, তরীতে বাসনা থাকে ধর রে মন সাধু সঙ্গ, ঘরের কেবা ঘুমায় কেবা জাগে’ ইত্যাদি বেশকিছু জনপ্রিয় লালন গান মধ্যরাত পর্যন্ত শ্রোতার মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জামালপুর লালন একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক একেএম আশরাফুজ্জামান স্বাধীন।
জামালপুর লালন একাডেমীর নতুন কমিটির অভিষেক ও বাউল সন্ধ্যা
