জুতা মেরে গরু দান

মোহাম্মদ আলী : কয়েক দিন আগে যে ছাত্র ছাত্রীরা তাদের প্রধান শিক্ষককে, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও আওয়ামী লীগের দুসর বলে কিল, ঘুষি, চর থাপ্পড় ও জুতা পেটা করে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছিল, তারাই আবার ফুলের মালা দিয়ে তাকে স্কুলে বরণ করে নিল!
জেলার ইসলামপুর উপজেলা বেনুয়ার চর এমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরে আলম শাহীনকে নিয়ে এমন নাটকীয়তা প্রত্যক্ষ করলেন এলাকাবাসী।
অতিসম্প্রতি, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানোকে কেন্দ্র করে বেনুয়ার চর এমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, মোঃ নুরে আলম শাহীন ও সহকারী শিক্ষক হযরত আলীর সাথে মারামরির ঘটনা ঘটে।
সেই ঘটনাকে কেন্দ্র সহকারী শিক্ষক হযরত আলী সমর্থীত ছাত্র ছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হন। পরের দিন তারা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ওইদিন তাদের আন্দোলনের সাথে একাত্বতা পোষণ করেন অভিভাবক ও এলাকার স্বর্বস্তরের জনগণ। তারা এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষককে তার কক্ষে আটকে কিল, ঘুষি, চর, থাপ্পড় ও জুতা পেটা করে। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষককে সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ ও আওয়ামী লীগের দুসর বলে আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করে।
এভাবে সাড়ে ৫ ঘন্টা বিরতিহীন আন্দোলন চলাকালে ইসলামপুর থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল প্রধান শিক্ষক নুরে আলম শাহীনকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেয়।
এই ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আবার তাকে ফুলের মালা দিয়ে স্কুলে বরণ করে নেন।
এব্যাপারে শিক্ষার্থী অভিভাবক ও এলাকাবাসী জানান, মার খাওয়ার পরের দিন থেকে প্রধান শিক্ষক নুরে আলম শাহীন তার স্বপদে ফিরতে দৌড় ঝাপ শুরু করেন। তিনি ম্যানেজিং কমিটির আহবায়ক থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের দোয়ারে ধর্না দেন। যাকে যা দিয়ে খুশি করা দরকার তাকে তা দিয়েই পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এভাবেই তিনি কোনো রকম শাস্তি বা হুশিয়ারি ছাড়াই স্বপদে ফিরেছেন।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, মোঃ শহিদুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, গত ১৭ বেনুয়ার চর এমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়টি একটি আওয়ামী লীগের ঘাটিতে পরিণত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সকল দলীয় কর্মকাণ্ড এই স্কুলে হতো। এই স্কুলকে ঘিরে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বারে বারে নিয়োগ বাণিজ্য করেছে। এদসত্বেও সাবেক এমপি, সুলতান মাহমুদ বাবুর মধ্যস্থতায় স্কুলের পাঠদান স্বাভাবিক করতেই তাকে আরেকবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
বেনুয়ার চর এমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এমন গর্হীত কাজ করার পরেও কেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? জানতে চাইলে ইসলামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, আরিফা বেগম বলেন, দুই শিক্ষক ও বিরোধ আপোষ মিমাংসা করায় আমরা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।