জুলাই গণঅভ্যুত্থান আগামী দিনে বিশ্বের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যা করতে পারেনি, জামায়াতে ইসলামী তা করেছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান আগামী দিনে বিশ্বের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পল্টন-মতিঝিল জোনের (ঢাকা-৮) উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে শহীদ পরিবার ও আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করাদের নিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বুলবুল বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তের উপর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব ছিল জুলাই আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, শহীদ পরিবার ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের পুনর্বাসন, জুলাই সনদ, রাষ্ট্রের সংস্কার, গণহত্যার বিচার। কিন্তু সরকার কেবল জুলাই ফাউন্ডেশন গঠন করেই দায়িত্ব শেষ মনে করেছে। জুলাই ফাউন্ডেশনের সুফল জুলাইযোদ্ধারা পায়নি। জুলাইযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও এক বছরেও কেউ সেই ভাতা পায়নি। অথচ ৫ আগস্ট পরবর্তী জামায়াতে ইসলামী সব শহীদ পরিবারকে আর্থিক ২ লাখ টাকা করে উপহার দিয়েছে। যাতে করে পরিবারগুলো নিজেরা চলতে পারে। 

তিনি বলেন, জুলাইয়ের শহীদ নিয়ে ১০ খণ্ডে ১৫শ পৃষ্ঠার বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করা হয়েছে। যাতে করে কেউ জুলাইয়ের ইতিহাস মুছে দিতে না পারে কিংবা বিকৃত করতে না পারে। আগামীতে আহতদের নিয়ে বই প্রকাশ করবে জামায়াতে ইসলামী। অথচ এসব দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের ও সরকারের। 

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান আগামী বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পৃথিবীর যেখানেই কেউ ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠতে চাইবে, তাকে আগে বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করতে হবে। বিশ্ববাসী সব ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আমাদের জুলাই আন্দোলনকে প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করবে। দুর্নীতি, অনাচার, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের কবল থেকে জাতিকে মুক্ত করতে জুলাইযোদ্ধারা জীবন ও রক্ত দিয়েছে। যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে জীবন দেয়, তারা যেন আল্লাহর রাস্তায়ই জীবন দিলো। তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে শহীদ। 

তিনি বলেন, যারা জুলাই সনদকে গুরুত্ব দেয় না, তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকেও স্বীকার করে না। তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের প্রতিনিয়ত হেয়প্রতিপন্ন করে কথা বলছে। অথচ জুলাই যোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময় এরা আজ লম্বা লম্বা কথা বলছে। যেখানে বিগত ১৫ বছর তারা রাজপথে আসতে পারেনি, দাঁড়াতে পারেনি। 

জামায়াতে ইসলামী জুলাই যোদ্ধাদের যেকোনো প্রয়োজনে, যেকোনো সময় সবার আগে পাশে ছিল এবং থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়নে জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত ৭ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। ৭ দফা বাস্তবায়ন হলে নতুন বাংলাদেশ গঠিত হবে। নয়তো আবারও নতুন রূপে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে। যার আলামত জাতি এরইমধ্যে দেখতে পাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগর নায়েবে আমির ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমির শাহীন আহমেদ খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমির মাওলানা শরীফুল ইসলাম, শাহবাগ পূর্ব থানা আমির আহসান হাবীব, শাহবাগ পশ্চিম থানা আমির অ্যাডভোকেট শাহ মাহফুজুল হক, মতিঝিল পূর্ব থানা আমীর মো. নুর উদ্দিন, শহীদ হৃদয়ের মা, শহীদ লিটনের ছোট বোন, শহীদ আল-আমীনের মা, শহীদ কামাল মিয়ার মেয়ে সুরাইয়া, আহত জুলাই যোদ্ধা আবু বক্কর, আহত জুলাই যোদ্ধা হারুন, আহত জুলাই যোদ্ধা হেলাল মিয়া, আহত জুলাই যোদ্ধা রফিকুল ইসলাম রুবেল প্রমুখ। 

শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত জুলাইযোদ্ধারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, জামায়াতে ইসলামী ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দলকে তারা তাদের পাশে পায়নি। আর্থিক সহযোগিতা কিংবা চিকিৎসা তো দূরের কথা কেউ তাদের খোঁজ রাখেনি। রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি ভূমিকা রেখেছে জামায়াতে ইসলামী। তাই তারা জামায়াতে ইসলামীর অবদান ভুলবেন না। এসময় তারা অনতিবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা এবং গণহত্যার বিচার নিশ্চিত ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের আয়োজন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। 

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের সর্বপ্রথম কাজ ছিল আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং শহীদ পরিবারের ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের পুনর্বাসন করা। এরপরই রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনদুর্ভোগ নিরসন করা। তারপর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু সরকারের কোনটিই এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। কারণ একটি দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার পর থেকে শুধু নির্বাচন, নির্বাচন করছে। তারা সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেনি।