জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে দায়ের করা অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যম আটকে যাওয়া টাকা ফেরত পেয়েছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ১৫০ জন গ্রাহক। তারা বলছেন, টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টি অপ্রত্যাশিত। আটকে যাওয়া টাকা ফেরত পাওয়া যাবে, এমন আশা অধিকাংশই করেননি। আবার টাকার টেনশনে চাপে পরে অসুস্থতার মুখোমুখিও হয়েছেন বলেও দাবি করেন অনেকেই। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ইভ্যালির টাকা ফেরতের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ জনের হাতে টাকার চেক তুলে দেন। আর বাকি ১৪০ জন পরবর্তী সময়ে সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী বুথ থেকে চেক সংগ্রহ করেন। এই ১৫০ গ্রাহককে ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
টাকা ফেরত নিতে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসা সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, আমি অনেক খুশি। তখন দুটি অর্ডার করেছিলাম। সেটির অর্ধেক টাকা আজ ফেরত দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বাকি টাকাও সামনের কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। এই টাকা ফেরত পাব, এমন কোনো চিন্তা আমার ছিল না। আমি মাঝখানে মালয়েশিয়া চলে গিয়েছিলাম। দুইবার টেনশনে স্ট্রোকও করেছি।
কামরুল হাসান নামের আরেক গ্রাহক টাকা ফেরত পেয়ে বলেন, আমি ২০২১ সালে অর্ডার করেছিলাম। কখনো ভাবিনি যে এই টাকা ফেরত পাব। আসলে আমরা অধিকাংশ ভোক্তাই ভেবেছিলাম যে, এই টাকা জীবনেও তুলতে পারব না। তবে সবার প্রচেষ্টায় সেটি সম্ভব হয়েছে।
শাহিনা নাজনীন নামের আরেক গ্রাহক বলেন, আমি একটি এসি অর্ডার করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে যখন সবকিছু বন্ধ হয়ে গেল, ভেবেছিলাম এই টাকা আর পাব না। কিন্তু আজকে ফেরত পেলাম। খুবই ভালো লাগছে।
চলতি ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে আবারও গ্রাহকদের অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হবে জানিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, আজ ২৫০ জন মানুষকে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হলেও ১৫০ জনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে। শুরুতে ছোট ছোট অ্যামাউন্টের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি ধারাবাহিকভাবে সব অভিযোগের নিষ্পত্তি করে গ্রাহকের টাকা যেন পরিশোধ করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে সবাইকেই আন্তরিক ভূমিকা পালন করতে হবে। ইভ্যালি কর্তৃপক্ষও যদি আমাদের সাথে সমন্বয় করে সহযোগিতা করে, তাহলে আমরা আশা করি সময়সাপেক্ষ হলেও পর্যায়ক্রমে সব গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে পারব।
মহাপরিচালক বলেন, ই-কমার্স বিজনেস বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এটি বিশ্বে এবং বাংলাদেশে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। আমরা ক্রস বর্ডার কানেকশন স্থাপনের কথাও ভাবছি। একটি স্মার্ট নীতিমালা ই-কমার্স ব্যবসার জন্য প্রণয়ন করার কাজও চলছে।
এ সময় টাকা পরিশোধ করার ব্যাপারে ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ আন্তরিক উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মাদ রাসেল বলেন, ইভ্যালির কাছে পাওনাদার প্রতিটি গ্রাহকের দেনা পরিশোধ করা হবে। এক্ষেত্রে যারা অভিযোগ করেছেন, অথবা যারা অভিযোগ করেননি সবাইকেই তালিকা অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করা হবে।
এ সময় অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগ) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন ও উপ-পরিচালক (অভিযোগ) মাসুম আরেফিনসহ ইভ্যালির অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।