ট্রাকের ধাক্কাকে কেন হত্যাচেষ্টা বলা হচ্ছে, জানালেন সারজিস

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। দিনের ব্যবধানে দুইবার তাদের বহরের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

বিষয়গুলোকে কেন নিছক দুর্ঘটনা না বলে হত্যাচেষ্টা বলা হচ্ছে— এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। হত্যাচেষ্টার দাবি সম্পর্কে অনেককে নেতিবাচক মন্তব্যও করতে দেখা গেছে। বিপরীতে অনেকেই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যদিও বিবিসি বাংলাকে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন সারজিস আলম নিজেই।

প্রথম ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার, চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায়। আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজা শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের গাড়িবহরের একটি গাড়ি। এ সময় সমন্বয়কদের বহরে থাকা একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে ট্রাকের ধাক্কা লাগে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। তবে গাড়ির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘটনা প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, আমরা প্রথমে হত্যাচেষ্টা সন্দেহ করিনি। ঘটনার পর ওই ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। কিন্তু তখন কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। ফলে সন্দেহজনক মনে হয়। উনি বলছিল, উনি জিনিসপত্র আনলোড করার জন্য এনেছিল। কিন্তু কোনো নথিপত্র ওনার কাছে নাই। মালিকপক্ষের কথা জিজ্ঞেস করলে বলে বিদেশে থাকে।

“পরে তাকে বললাম– মালিক ছাড়া তো আপনাকে যেতে দেওয়া হবে না, আপনার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; কারণ শিক্ষার্থীরা এই গাড়ি ভাড়া নিয়ে এসেছে; এটি শিক্ষার্থীদেরও গাড়ি না; এই ক্ষতিপূরণ তো শিক্ষার্থীরা দিতে পারবে না। আমরা চাচ্ছিলাম যে এটি যেন সহজে শেষ করে ফেলা যায়। কিন্তু তখন উনি আবার বললেন– মালিক জেলে আছে”, বলছিলেন সারজিস আলম।

তিনি আরও বলেন, তখন তাকে (ট্রাক চালক) প্রশ্ন করতে করতে পাওয়া গেল, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে একটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে জেলে আছে ট্রাকের মালিক। তখন বিষয়টিকে সন্দেহজনক লাগে। পরে জিডি করি। কিন্তু জিডিতে তদন্ত করা যায় না। পরে মামলা দেই। এখানে ওনার সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলে মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।

ট্রাক মালিকের বিষয়ে তারা সুনির্দিষ্ট কিছু জানতে পেরেছেন কি না— জানতে চাওয়া হলে সারজিস বলেন, জুলাই অভ্যূত্থানের মামলায় আসামির ব্যাকগ্রাউন্ড তো আওয়ামী লীগই।

সারজিস আলম আরও জানান, তারা প্রতিনিয়ত রিকশা বা সিএনজিতে করে চলাফেরা করেন। গাড়িতে মাঝেমধ্যে চড়েন।

লোহাগাড়া থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, সারজিস-হাসনাতদের গাড়িতে ধাক্কা দেওয়া ট্রাকের মালিকের নামে একটি রাজনৈতিক মামলা আছে।

পরদিন বৃহস্পতিবার আরেকটি ঘটনা ঘটেছে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে। সেখানে হাসনাত আবদুল্লাহকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

পরে সারজিস আলমও ফেসবুকে লেখেন, কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসার পথে হাসনাতের গাড়িতে পিছন থেকে আবার অন্য গাড়ি দিয়ে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

ওয়ারী থানা সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নামতে কাপ্তান বাজারের মুখে হাসনাতকে বহনকারী গাড়িটিকে আরেকটি গাড়ি ধাক্কা দেয়।

তবে, এ ঘটনায় কোনো মামলা বা অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, এ ঘটনায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।