বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাদিক কায়েম নিজেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি দাবি করেছেন। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ দাবি করেন তিনি। পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর থেকে ফেসবুকে তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা, বিতর্ক।
প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পর ঢাবি ক্যাম্পাসে শিবির প্রকাশ্যে আসায় অনেকেই নতুন করে আলোচনা শুরু করেছেন। এ নিয়ে অনেককে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্য করতে দেখা যায়।
ঢাবির শিবির সভাপতি হিসেবে হঠাৎ প্রকাশ্যে আসায় এর তীব্র সমালোচনা করেছেন আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘সাদিকের শিবিরের সভাপতি ঘোষণা নিয়ে আমার আপত্তি নেই, আপত্তি যে সে নিজের পরিচয় গোপন রেখে সাধারণ ছাত্রদের সাথে ও জনতার ঈমানের প্রতি বেঈমানি করেছে। সমন্বয়করা অরাজনৈতিক জেনেই তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে সবাই। শিবিরের কারো ডাকে সাড়া দেয়নি। ছাত্রদের মধ্যে বাদবাকি কেউ শিবির থেকে থাকে তারাও ঘোষণা দিয়ে বের হয়ে যাক। অন্য দলের থাকলেও বের হয়ে যাক। এ ধরনের কাজ মোনাফেকি কাজ কারবার। সাদিক নিজে মোনাফেক, তার পরিচয় গোপন রেখে জামায়াত ও দল হিসেবে জাতির সাথে মোনাফেকি করেছে বলে আমি মনে করি।’
ফ্রান্সে থাকা মানবাধিকারকর্মী ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য অবশ্য বিষয়টি বেশ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। ঢাবিতে শিবিরের রাজনীতি প্রকাশ্যে শুরু হলে বিরাজনীতিকরণের পরিকল্পনা ঠেকিয়ে দেওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।
ফেসবুকে তিনি লেখেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনীতি মুক্ত করার চক্রান্তের মুখে সাদিক কায়েম খুবই সঠিক পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড নিয়েছেন। ঢাবিতে শিবিরের রাজনীতি প্রকাশ্যে শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজনীতিকরণের পরিকল্পনা ঠেকিয়ে দেওয়া যাবে। ছাত্র রাজনীতিকে ভিলেইন বানানোর সুশীল চক্রান্ত আমাদেরকেই রুখে দিতে হবে। বাংলাদেশের মতো দেশের ছাত্ররা একটা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিরোধের শক্তি। এই শক্তিকে নির্বীর্য করে দেয়ার চেষ্টা অনেক দিন থেকে চলছে। সকল ছাত্র সংগঠন তাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিকে সচল করুক। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনী উৎসব দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুখরিত হোক।
আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামি বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। কারণ প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ না পেয়েও সাদিক কায়েমের মতো একজন নেতা তৈরি করতে পেরেছে শিবির।
ফেসবুকে তিনি লেখেন, একটা স্ট্যাটাস লেখার জন্যে দুপুর থেকেই চিন্তা করছিলাম, বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে ওঠার মতো অবস্থা হয়েছিল আমার সিদ্ধান্তের। এক ফুট উঠে তো আবার দুই ফিট স্লিপ করে নিচে নামে। স্বভাব যেহেতু এ ধরনের মতামত চেপে রাখার বিপক্ষে, তাই আমিও আর চেপে রাখতে পারলাম না। তৈলাক্ত বাঁশটা পার করেই ফেললাম।
‘ছেলেটাকে আমি চিনতাম সালমান নামে। পরিচয় জুলাইর ২৫ তারিখ থেকে। তারপর নিয়মিতই কথা হতো। আমার খুব কাছের বন্ধুদের একটা নেটওয়ার্ক অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমন্বয়ককে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করে। মূলত সালমানের সাথে কো-অর্ডিশন করেই সব আয়োজন করা হয়। বয়সে বেশ ছোট সালমানের সাথে বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ একটা সম্পর্ক তৈরি হয় আমার ও আমার বন্ধুদের। ডিবি কার্যালয় যখন সমন্বয়কদের শীর্ষ নেতৃত্ব আটক, তখন সালমান ও অন্যান্য সমন্বয়করা পুরো আন্দোলনের নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। নিরাপদ আবাসে থাকা সবার সাথেই আমার নিয়মিত যোগাযোগ হতো, সত্যি বলতে কী সালমানের পুরো পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ দেখে আমি বেশ অবাকই হচ্ছিলাম। কতইবা বয়স তার হয়ত ২৪/২৫ হবে, তারপরও এই ছেলে যেভাবে সব পরিস্থিতি আমার বন্ধুদের পরামর্শে ম্যানুভার করেছে এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ সব স্ট্রাটেজিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
এই তো কয়েকদিন আগেই কথা হলো সালমানের সাথে, কোনো পরিবর্তনই নেই ছেলেটার মধ্যে, নিরহংকার সেই একই সালমান। অন্য সমন্বয়কদের থেকে সালমান ও কাদের এই দুটো ছেলে একেবারেই ভিন্ন। দুজনের নেতৃত্বই অত্যন্ত বলিষ্ঠ। তো আজকে দুপুরে জানলাম সালমানের প্রকৃত নাম সাদিক কায়েম এবং তার রাজনৈতিক পরিচয় সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি। অবশ্যই অবাক হয়েছি, বেশ অবাক হয়েছি। কিন্তু প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ না পেয়েও শিবির যে সালমানের (আমার কাছে সে সালমানই থাকবে) মতো একটা নেতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে তার জন্যে সাধুবাদ জানাই। ছাত্র রাজনীতি সুষ্ঠু ধারার গণতন্ত্রের জন্যে অত্যাবশ্যক এবং তার সদ্ব্যবহার করে যে কোন রাজনৈতিক দলই যদি সালমান কিংবা কাদেরের মতো তরুণ-তরুণীদের এত ম্যাচিউরড নেতা/নেত্রী হিসেবে তৈরি করতে পারে, তাহলে মন্দ কি?
সাংবাদিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষার্থী আবির হাকিম ফেসবুকে লেখেন, কোভিডের পরে সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের এক বড় ভাই একদিন সাদিকরে পরিচয় করাইয়া দিছিলো। বলছিল, সাদিক আমাদের এলাকার ছোটো ভাই। ছাত্রলীগের ফ্রেশ ইমেজের ছেলে। সামনে ওরে হলের নেতা বানাইতে হবে। আমি যেন দেখে রাখি। সবকিছুই মানা যায় ভাই। কিন্তু ওরা যে শিবির হয়ে ফিরে আসতে পারে তা ভাবতে পারি নাই।