স্টাফ রিপোর্টার: তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস এবং তামাক নিয়ন্ত্রণের আন্তর্জাতিক চুক্তি (WHO FCTC Article 5.3) লঙ্ঘন করে তামাক কোম্পানির সাথে সরকারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবীতে প্রায় ১০ হাজার তামাকবিরোধী যুব প্রতিণিধির স্বাক্ষর সংবলিত আবেদন মাননীয় অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই আবেদনের অনুলিপি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বরাবর জমা দেয়া হয়েছে। রোববার (১৭ আগস্ট) আয়োজক সংগঠন নারী মৈত্রী, ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব রুরাল পুওর (ডরপ), ঢাকা আহছানিয়া মিশন ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এই আবেদন জমা দেওয়া হয়।
এই আবেদনে ঢাকার বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে ১০ হাজারের মত শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করে। এর মাধ্যমে তারা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তাদের দাবী তুলে ধরে এবং সম্প্রতি আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করে তামাক কোম্পানির প্রতিণিধিদের সাথে সরকারের বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত দ্রুত বাতিলের দাবী জানায়।
বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধীত ২০১৩) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল এফসিটিসি-এর সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বেশ কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাগুলো হলো— পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করা, সকল ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র সতর্কবার্তা বৃদ্ধি করে শতকরা ৯০ ভাগ করা । সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সিভিল সোসাইটিসহ সকল অংশীজনদের সাথে বহুবার পরামর্শ করে প্রণীত খসড়া ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে জনসাধারণের মতামত গ্রহণপূর্বক চূড়ান্ত করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সরকার ইতিমধ্যে ই-সিগারেট আমদানী নিষিদ্ধ ও দেশের অভ্যন্তরে ই-সিগোরেট উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেছে।
প্রস্তাবিত খসড়া আইন অনুমোদিত হলে তা পরোক্ষ ধূমপানের স্বাস্থ্যক্ষতি থেকে অধূমপায়ীদের সুরক্ষা প্রদান, তরুণ প্রজন্মকে তামাকের বিষাক্ত ছোবল থেকে রক্ষা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে দেশের বৈশ্বিক অবস্থান উন্নয়নে অবদান রাখবে।
এ প্রসঙ্গে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব রুরাল পুওর (ডরপ) এর উপ নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান বলেন, ‘‘সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী পাস তামাক কোম্পানি ও সরকারের এক প্রকার দর কষাকষিতে পরিণত হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমান সময়ে তরুনরা সকল অসংগতির বিরুদ্ধেই সোচ্চার। সেই ধারাবাহিকতায় তামাকবিরোধী যুব প্রতিণিধিদের এই দাবী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করবেন।”
তামাকবিরোধী যুব প্রতিণিধি নাইমুর রহমান ইমন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টোব্যাকো এটলাস অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়—প্রতিদিনের হিসাবে যা ৪৪২ জন। GATS 2017 অনুযায়ী, ধূমপান না করেও গণপরিবহন, রেস্টুরেন্ট ও পাবলিক প্লেসে পরোক্ষ ধূমপানে আক্রান্ত হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ। এই ভয়াবহ বাস্তবতা মোকাবেলায় দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা অত্যন্ত জরুরী।’’
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আক্তার ডলি বলেন, ‘‘২০০৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)–এ স্বাক্ষর করে এবং ২০০৮ সালে এর ৫.৩ ধারা বাস্তবায়নের গাইডলাইনেও সম্মতি দেয়। এই ধারায় বলা হয়েছে, তামাক কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা রাখতে হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পারছি যে, বর্তমান সরকার তামাক কোম্পানির সাথে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তাই অবিলম্বে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “১০ হাজার শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সংবলিত আবেদন মাননীয় অর্থ উপদেষ্টাসহ পাঁচ উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করি সরকার বর্তমান প্রজন্মের এই শক্তিশালী বার্তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা…