দরপত্র ছাড়াই পুরোনো সেতুর মালামাল বিক্রি করে দিলেন ঠিকাদার

প্রায় দেড় যুগ আগে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের থানসিংহপুর কাচারি সড়কে আলাই নদীর ওপর স্থানীয়দের চলাচলের জন্য একটি ফুট ব্রিজ (হেঁটে চলাচলের সেতু) নির্মাণ করা হয়। উন্নত যোগাযোগের স্বার্থে সেখানে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রয়োজন দেখা দেয় পুরোনো সেতুটি ভেঙে ফেলার।

পুরোনো মালামাল বিক্রি করতে নিয়মানুযায়ী দরপত্র আহ্বান করতে হয়। কিন্তু দরপত্র আহ্বান না করেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জাকাউল্লা এন্ড ব্রাদার্স’ ব্রিজের দুই পাশের ইট-রডসহ সব কিছু খুলে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভেঙে ফেলা পুরোনো সেতুটি গাইবান্ধা সদর উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নিয়ন্ত্রণাধীন।

এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের থানসিংহপুর কাচারি সড়কে আলাই নদীর ওপর দেড় যুগ আগে নির্মিত ফুট ব্রিজ দিয়ে হেঁটে কোনো মতে লোকজন চলাচল করতে পারত এলাকাবাসী। রিকশা-ভ্যান থেকে শুরু করে ভারি কোনো যানবাহন চলতো না। উন্নত যোগাযোগের স্বার্থে ৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫৪ মিটার আধুনিক সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। যথারীতি টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জাকাউল্লা এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান গত বছরের শেষের দিকে সেতুটির কাজ শুরু করে। যা চলতি বছরের ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। 

কিন্তু এলজিইডি কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাবে দরপত্র আহ্বান ছাড়াই সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জাকাউল্লা এন্ড ব্রাদার্স পুরাতন ব্রিজটির দুই পাশের ইট-রডসহ সকল মালামাল দিনে-দুপুরে বিক্রি করে দিয়েছে। এ খবর দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এলাকার লোকজন‌। পরে গাইবান্ধা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিউল ইসলাম সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দেন এবং মালামাল ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

বোয়ালি ইউনিয়নের থানসিংহপুর এলাকার বাবু মিয়া বলেন, আমরা এলাকাবাসী অত নিয়ম-কানুন বুঝি না। তবে আমরা দেখেছি ঠিকাদারের লোকজন ট্রাক্টর যোগে ইট-রডসহ অনেক মালামাল নিয়ে গেছে। গত কয়েকদিন থেকে শুনতেছি তারা নাকি সেগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে।একই এলাকার মঞ্জু মিয়া নামে একজন জানান, এই মালামালগুলো যখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন নিয়ে যায় এলাকাবাসী তখন বাধা দিয়েছিল। কিন্তু তাদের গুন্ডা বাহিনীর কাছে এলাকাবাসী ছিল অসহায়। যেহেতু মালামালগুলো সরকারি। এগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। 

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকাউল্লা এন্ড ব্রাদার্সের চেয়ারমান মো. জাকাউল্লাহ বলেন, আমার সারাদেশে অনেকগুলো সাইট চলে। গাইবান্ধায় ব্রিজের মালামাল বিক্রির বিষয়ে আমি কিছু জানি না। গাইবান্ধায় আমার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব। তাছাড়া কোনো কারণ দর্শানোর চিঠি পাইনি। তবে মেইলে দিয়ে থাকলে তা চেক করা হয়নি।

গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিউল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সদর উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে কারণ দর্শানোর জন্য একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। পাশাপাশি মালামাল ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যথাযথ জবাব না পেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।