এশিয়ার দ্রুতবর্ধনশীল সম্ভাবনাময় বাজারগুলোতে বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট শুরু হচ্ছে ২৭ জুলাই। এটি চলবে ২৮ জুলাই পর্যন্ত।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ: এন্ডলেস পসিবিলিটিজ’ ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : অসীম সম্ভাবনা’ স্লোগানে দ্বিতীয় বছরের মতো এই আয়োজন করা হচ্ছে।
রোববার (১৪ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আমেদ পলক ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৪’ এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সচিব এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শামসুল আরেফিন।
এছাড়াও আয়োজকদের দিক থেকে উপস্থিত ছিলেন স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামি আহমেদ, সামিটটির ইভেন্ট পার্টনার উইন্ডমিল অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাব্বির রহমান তানিম, কম্যুনিকেশন পার্টনার এশিয়াটিক মাইন্ডশেয়ার লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোরশেদ আলম এবং ম্যানেজিং পার্টনার তাসনুভা আহমেদ টিনাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যান্য কর্মকর্তারা।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পাওয়ারড বাই স্পন্সর— এসবিকে টেক ভেঞ্চারসের ফাউন্ডার অ্যান্ড ম্যানেজিং পার্টনার সোনিয়া বশির কবির এবং সিইও মুনজারিন মাহবুব অবনি। প্রিমিয়াম স্পন্সরদের মধ্য থেকে আমি প্রবাসী লিমিটেডের সিইও অ্যান্ড কো-ফাউন্ডার নামির আহমেদ নুরি এবং বিজনেস অপারেশন লিড আহসানুল হক আদনান, নেক্সট ভেঞ্চারসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সৈয়দ আবদুল্লাহ জায়েদ এবং চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার সৈয়দ আবদুল্লাহ গালিব উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সামি আহমেদ। এরপর সামিট ইভেন্টটির প্ল্যান এবং ডিজাইন নিয়ে অতিথিদেরকে বিস্তারিত ধারণা দেন উইন্ডমিলের সাব্বির রহমান তানিম। তিনি জানান, এবার দেশের বাইরে থেকে বিজনেস ও স্টার্টআপ জগতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট, এবং ইনভেস্টর অর্গানাইজেশন গুলো এই ইভেন্টে অংশ নিতে আসছেন।
অনুষ্ঠানে মাইন্ডশেয়ারের মোরশেদ আলম তার বক্তব্যে, ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৪’ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে ইভেন্টের আগে-পরে এবং সমস্ত আয়োজন চলাকালে পুরো সামিটের বিষয়ে আগ্রহী এবং সংশ্লিষ্ট নাগরিকসহ সবাইকে জানানোর বিষয়টিও সবার সামনে তুলে ধরেন।
আয়োজকরা বলছেন, বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৩ এর ব্যাপক সাফল্যের কারণে এই বছরের আয়োজনটি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বিশেষ সাড়া পেয়েছে। ১০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারী নিয়ে বিশ্বব্যাপী দ্বিগুণ হয়েছে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা। সামিটে ৫৫ এর চেয়েও বেশি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং বিনিয়োগ সংস্থার পাশাপাশি, বহু সংখ্যক অ্যাঞ্জেল বিনিয়োগকারী, স্টার্টআপ উৎসাহী এবং আন্তর্জাতিক স্টার্টআপ হোস্ট করবে বলেও জানানো হয়েছে।
তারা আরও জানান, ভারতের ইউনিকর্ন স্টার্টআপ আপগ্রেডের এমডি মায়া, সিলিকন ভ্যালির গ্লোবাল স্টার্টআপসসহ বাংলাদেশের বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠাতাদের মতো সম্মানিত ব্যক্তিরা মূল অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থাকবেন। সারা বিশ্ব থেকে ১০০ জনেরও বেশি প্রসিদ্ধ বক্তা।
তারা বলছেন, ৩০টি আকর্ষণীয় সেশনের প্রতিশ্রুতিতে আয়োজনকে আঞ্চলিক স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে পরিণত করেছে।
সামিটের কার্যক্রম সম্পর্কে তারা বলেন, এতে এআই অ্যান্ড টেকনোলজি, স্টার্টআপ এডুকেশন, দ্য আর্ট অব ফান্ডরেইজিং, ফিনটেক, এডটেক, ক্লাইমেট ভালনারেবিলিটি, ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট, লজিস্টিকস, মোবিলিটি অ্যান্ড ই-কমার্স, আরএমজি শোকেসিং এবং ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিটেক-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে কাভার করে সেশনের আয়োজন থাকবে। অংশগ্রহণকারীদের জন্য দিনব্যাপী শোকেস, প্রশিক্ষণ সেশন, নীতি আলোচনা এবং নেটওয়ার্কিং সুযোগ থাকবে। ইভেন্টটি বাংলাদেশ স্টার্টআপ আউটলুকের একটি উদ্বোধনী অধিবেশনের মাধ্যমে শুরু হবে, এরপর ‘লেভারেজিং এআই ইন বাংলাদেশ: টুডে অ্যান্ড দ্য নেক্সট ফাইভ ইয়ারস’ এর সঙ্গে এআইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এছাড়াও ‘দ্য আর্ট অফ ফান্ডরেইজিং’ এবং ‘ফিউচার অব লার্নিং’ আলোচনার মাধ্যমে কাভার করা হবে। বৈদ্যুতিক যানবাহন, কৃষি-প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং ফিনটেক নিয়ে শিল্প-নির্দিষ্ট আলোচনা করা হবে। স্টার্টআপদের জন্য এআই-সক্ষম টেক প্রডাক্ট তৈরি করার এবং কার্যকরভাবে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম নেভিগেট করার নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থাকবে।
স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ বলেন, ২ দিনের সামিট অংশগ্রহণকারীদের উদ্ভাবনী উদ্যোগের বৃদ্ধি এবং স্কেলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ডিং সংগ্রহের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিবে। অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের সেরা দিকগুলো দেখার সাথে সাথে বিশ্বের শীর্ষ স্টার্টআপ লিডারদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ পাবেন। স্টার্টআপ ফাউন্ডাররা, ইন্ডাস্ট্রি লিডারদের কাছ থেকে মার্কেটের সাম্প্রতিক অবস্থা, ব্যবসায়িক কৌশল এবং স্কেলিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। মূল স্টেকহোল্ডারদের সাথে সংযোগের মাধ্যমে, উদ্যোক্তারা তাদের নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ পাবে, কার্যকর ফান্ডিং স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে জানতে পারবে এবং উদ্ভাবনী আইডিয়াগুলো কার্যকর করার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা পাবে। এছাড়াও এক জায়গাতেই বহু সংখ্যক স্থানীয় এবং বৈশ্বিক ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের সাথে সংযোগের অনন্য সুযোগ পাবেন, যা তাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগের বৃদ্ধি এবং স্কেলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ডিং সংগ্রহের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে।
তিনি আরও বলেন, সব সম্ভাব্য উদ্যোক্তারা, তাদের আইডিয়াগুলোকে ইকোসিস্টেম লিডারদের সহায়তায় বাণিজ্যিক সমাধানে পরিণত করতে শিখবে। এই সামিটটি স্টার্টআপ বাংলাদেশের একটি ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ, যা বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে প্রবৃদ্ধির গল্প এবং অফুরন্ত সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৪ আমাদের উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেমের বৈশ্বিক সম্ভাবনার একটি অনন্য সাক্ষ্য। উদ্ভাবক, বিনিয়োগকারী এবং নীতিনির্ধারকদের একত্রিত করে ক্রমবর্ধমান স্টার্টআপ অঙ্গনে বাংলাদেশ নিজের অগ্রণী অবস্থান নিশ্চিত করেছে। এই সামিটটি আমাদের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের বৃদ্ধি এবং প্রচারকে ত্বরান্বিত করে, নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা চেতনাকে উদ্দীপ্ত করবে। সামিটটি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, জ্ঞান বিনিময় সহজতর এবং স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতাদের জন্য সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে। এটি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম হিসেবে কাজ করবে।
পলক বলেন, আমরা একসঙ্গে বৈশ্বিক স্টার্টআপ ল্যান্ডস্কেপে বাংলাদেশকে অগ্রগণ্য অবস্থানে নিয়ে যেতে কাজ করে যাব।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৪ ইভেন্টটিতে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে সিগনেচার স্পন্সর সুইস অ্যাম্বাসি, কম্যুনিকেশন পার্টনার মাইন্ডশেয়ার, ইভেন্ট পার্টনার উইন্ডমিল, ইকোসিস্টেম ইন্যাবলার পার্টনার ইয়ুথ কো:ল্যাব, হসপিটালিটি পার্টনার ইন্টারকন্টিনেন্টাল, নলেজ পার্টনার লাইটক্যাসেল এবং রেজিস্ট্রেশন পার্টনার সহজ সম্পৃক্ত আছে।