দেড় কিলোমিটার সড়ক তৈরি করছেন ১০ গ্রামের মানুষ

দেওড়া, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার একটি গ্রাম। এই গ্রামের পাশে রয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। এই মাঠের মাঝ বরাবর স্বেচ্ছাশ্রমে দেড় কিলোমিটার সড়ক তৈরি করছেন ১০ গ্রামের মানুষ। সড়কটি দেওড়া গুলগুইল্লা মার্কেট থেকে উপজেলার খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে গিয়ে মিলেছে। সড়ক নির্মাণ নিয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই ১০ গ্রামের মানুষের।

স্থানীয়রা জানান, খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়নগর এবং আশপাশের ১০টি গ্রামের মানুষকে বরুড়া পৌর সদরে যেতে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়। গ্রামগুলো হচ্ছে দেওড়া, জয়নগর, কালামুড়ি, ছালিয়া, ভদ্রারপাড়, হোসেনপুর, আরিফপুর, মুশকিপুর ও জাঙ্গালিয়া প্রভৃতি। এ ছাড়া ফসলের মাঠে চাষের জন্য ট্রাক্টর ও ফসল বাড়িতে আনতে গাড়ি নেয়ার ব্যবস্থা নেই।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জ্যৈষ্ঠের কাঠফাটা রোদ। তার মাঝেও ৪০ জন মানুষ সড়ক তৈরি করছেন। মাথা থেকে ঘাম বেয়ে পড়ছে। তবু যেন কারো ক্লান্তি নেই। কেউ কোদাল দিয়ে মাটি কাটছেন। কেউ মাটির ঝুড়ি মাথায় নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলছেন। তাদের অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবী। যারা নিজেরা মাটি কাটতে পারছেন না তারা শ্রমিক রাখতে আর্থিক সহযোগিতা করছেন। দেড় কিলোমিটার সড়কের এক কিলোমিটার তৈরি হয়ে গেছে।

জয়নগর গ্রামের অহিদা খাতুন বলেন,আমাদের পুরাতন বাড়ি ছিলো দেওড়া। দেওড়ায় পানি কাদা মাড়িয়ে যেতে হয়। সড়কটি হয়ে গেলে আমাদের আর দুর্ভোগে পড়তে হবে না।

জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহেব আলী বলেন, দেওড়া থেকে জয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী আসে। এতে অনেক পথ ঘুরে আসতে হতো। সড়কটির কাজ শেষ হলে তারা কম সময়ে স্কুলে যেতে পারবে।

কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ও ইদ্রিস মিয়া অন্যদের সাথে মাটি কাটার কাজ করছিলেন। তারাও সড়কের জন্য জমি দিয়েছেন। তারা বলেন, নিজের ও মানুষের উপকারের জন্য জমি দিয়েছি।

অন্যতম উদ্যোক্তা দেওড়া গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন। তার সাথে রয়েছে দিদারুল আলম,আবু তাহের ,জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্যানরা। মোশারফ হোসেন বলেন, এই মাঠে সড়ক না থাকায় শত বছর ধরে এলাকাবাসী দুর্ভোগে পড়ছেন। রাস্তাটি তৈরিতে ৪০ জন মানুষ জমি দান করেছেন। আমরা এলাকার মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছি। ১০দিনের মধ্যে কাজটি শেষ হবে বলে আশা করছি।

বরুড়া পৌরসভার মেয়র বকতার হোসেন বলেন, রাস্তার কাজটি দেখতে গিয়েছি। এ কাজের জন্য সহায়তা করবো। এছাড়া পৌরসভার বরাদ্দ আসলে সড়কে ইটের সলিংয়ের ব্যবস্থা করবো।

বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নু এমং মারমা মং বলেন, এবিষয়ে এমপি মহোদয় ও মেয়র সাহেবের সাথে কথা বলবো। দেখি তাদের কিভাবে সহযোগিতা করা যায়।