নিটারে শিক্ষার্থীদের দাবি ও প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি: মতবিনিময় সভায় গঠনমূলক আলোচনা

সাভারে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ (নিটার) এ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা, দাবিদাওয়া এবং প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন নিয়ে সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

গত ৩০শে এপ্রিল (বুধবার) এই মতবিনিময় সভাটি আয়োজন করা হয়‌। সভায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা একটি সুসংগঠিত ও লিখিত দাবিপত্রের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে তাদের উদ্বেগ, প্রত্যাশা ও সুপারিশসমূহ তুলে ধরেন। পরিচালক শিক্ষার্থীদের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং প্রত্যেকটি বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।

শিক্ষার্থীরা প্রথমেই একাডেমিক দুর্বলতার কারণে ইয়ার ড্রপ, ফেইল ও রিটেক সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরেন। ৫৭ জন শিক্ষার্থী ইয়ার ড্রপের শিকার হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এই সমস্যার কার্যকর সমাধান চান তারা। এর জবাবে পরিচালক জানান, একাডেমিক দুর্বলতা চিহ্নিত করে আগামীতে অতিরিক্ত ক্লাস ও শিক্ষকদের মাধ্যমে আলাদা মনিটরিং চালুর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষে কাউন্সেলিং সেশন আয়োজন আপাতত সম্ভব নয়, তবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ‘ছাত্র ফোরাম’ গঠনের মাধ্যমে নিয়মিত মতবিনিময়ের পথ খুলে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

পরীক্ষা পদ্ধতির ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীদের কিছু প্রশ্ন ছিল, বিশেষ করে ইনকোর্স, অ্যাটেনডেন্স ও ফাইনাল মার্কের অনুপাত (২৫:৫:৭০) ও সিলেবাস নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে। তারা সিলেবাস শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যৌথ আলোচনায় নির্ধারণের প্রস্তাব দেন, যাতে প্রস্তুতির সময়সীমা ও গুরুত্ব অনুযায়ী সঠিক গাইডলাইন তৈরি করা যায়। পরিচালক এই প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন এবং জানান, পরীক্ষার প্রশ্ন ও সিলেবাসে স্বচ্ছতা আনতে ভবিষ্যতে নিয়মিত আলোচনা হবে।

ল্যাব কার্যক্রমের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শতকরা ৮০ ভাগ নম্বর ধার্য থাকলেও বাস্তবে তার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। পরিচালক এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে ল্যাব এসেসমেন্ট পদ্ধতি পর্যালোচনা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে ল্যাব সরঞ্জামের অভাব নিয়েও আলোচনা হয়, বিশেষ করে ইইই বিভাগে প্রাকটিক্যাল ক্লাস ঠিকভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে অসুবিধার কথা উঠে আসে। প্রশাসন জানায়, আগামী বাজেট বর্ষে নতুন সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হবে এবং ইইই বিভাগকে প্রাধান্য দিয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে।

পরিকাঠামোগত সমস্যার মধ্যে সিসিটিভি স্থাপন, জেনারেটর সংযোগ ও ক্লাসরুমে প্রজেক্টর বসানোর বিষয়টি উত্থাপন করা হলে, পরিচালক জানান যে জুন মাসের মধ্যেই সিসিটিভি সংযোগ সম্পন্ন হবে এবং মে মাসের শেষ নাগাদ সকল ক্লাসে প্রজেক্টর স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থাও উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

গবেষণা ও ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা CRIR-এর সাথে কাজের সুযোগ বাড়ানোর দাবি জানায়। পরিচালক বলেন, বিষয়টি নিয়ে CRIR-এর সাথে পুনরায় আলোচনা করা হবে এবং প্রতিটি বিভাগে গবেষণার জন্য গাইডলাইন দেওয়া হবে যাতে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ নিয়ে কাজ করতে পারে।

অর্থনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে পরিচালক খোলামেলা বলেন, প্রায় ২.৫ কোটি টাকা টিউশন ফি বাকি থাকায় প্রতিষ্ঠান কিছু কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন কার্যক্রম চালাতে পারছে না। তাই শিক্ষার্থীদের সময়মতো ফি পরিশোধের বিষয়ে সচেতনতা কামনা করেন তিনি। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব একাডেমিক ক্যালেন্ডার, পরীক্ষা সূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতি ঢাবির নির্দেশনা অনুযায়ী হবে বলেও তিনি স্পষ্ট করেন।

রিটেক ফি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বিভাগভেদে ফি ভিন্ন হওয়ার কারণ জানতে চাইলে পরিচালক জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। একই সঙ্গে সিএসই ও ইইই বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় অল্প গ্যাপ পাওয়ার কারণে প্রস্তুতিতে অসুবিধা হচ্ছে বললে, পরিচালক জানান বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে এবং এর সমাধানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।

শেষে ১৪ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক জানান, তদন্ত দ্রুতই শেষ হবে এবং সংশ্লিষ্টরা সময়মতো ফলাফল পাবে।

এই মতবিনিময় সভা নিটারে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও স্বচ্ছ, সহযোগিতামূলক ও দায়িত্বশীল করে তুলেছে। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, প্রশাসনের আন্তরিক মনোভাব ও প্রতিশ্রুতি ভবিষ্যতে নিটারকে আরও কার্যকর ও শিক্ষাবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে।