নির্বিচারে গুলি-গণহত্যা ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়

আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করার নির্দেশ দিয়ে যে গণহত্যা চালানো হয়েছে তা বিশ্বের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা। দলটির সর্বোচ্চ ফোরাম বলছে, পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো আন্দোলনে এত অল্প সময়ের মধ্যে এ রকম বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশন থেকে এ অভিমত গৃহীত হয়।

দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশন পরিচালনা করেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

এসময় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যরা।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের মুজিবুল আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, দলটির সর্বোচ্চ ফোরাম মনে করে, বিগত স্বৈরাচারের শাসনামলে জামায়াতে ইসলামীর হাজার হাজার নেতাকর্মী, দেশের আলেম-ওলামা, ইসলামী চিন্তাবিদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ দেশের সর্বস্তরের জনতা জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। তাদের সকলের ত্যাগ এবং কুরবানির বিনিময়ে বাংলাদেশ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা তাই কামনা করে।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা অভিমত ব্যক্ত করছে যে, এদেশের ছাত্রসমাজ নবউদ্যমে ১ জুলাই থেকে যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সূচনা করেছিল তা ছিল শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল। ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী, ১৫ জুলাই সেতুমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর উসকানিমূলক বক্তব্যে রংপুরে আবু সাঈদসহ সারাদেশে ৬ জন ছাত্র নিহত হয়। আবু সাঈদের নিহত হওয়ার ঘটনা দেশের ছাত্র-জনতাকে প্রতিবাদ মুখর করে তোলে। 

সরকার ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ১৯ জুলাই রাতে কারফিউ জারি করে এবং দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের পর রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি বর্ষণ করে গণহত্যা চালায়। গুলি অগ্রাহ্য করে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, শিল্পী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ ও সর্বস্তরের জনগণ রাস্তায় নেমে আসে এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে।  

৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে রুখে দেওয়ার আহ্বান জানায়। ফলে এদিন সারাদেশে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ৪ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কারফিউ জোরদার করার নির্দেশ দেয়। 

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা সকাল থেকে রাজধানীর রাজপথে নেমে আসে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তিন বাহিনী প্রধান ও পুলিশ প্রধানকে গণভবনে ডেকে নিয়ে আন্দোলন দমন করার জন্য বল প্রয়োগের নির্দেশ দেন। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান।