ন্যাশনল আর্মি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করলেন মেজর মান্নান

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের কনভেনশন হলে ৩০ শে জুলাই (বুধবার) এক সুধী সমাবেশে সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) আবদুল মান্নান লিখিতভাবে ন্যাশনল আর্মি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পেশ করেন। তিনি তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন – দ্রুত অগ্রসরমান একটি উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ। যার রয়েছে অনন্য ভৌগোলিক, জনসংখ্যাগত এবং ভূ-রাজনৈতিক চরিত্র। ভবিষ্যত জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে দেশের প্রতিরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা সুরক্ষার জন্য উদ্ভাবনী সামরিক পন্থার প্রয়োজন। এই প্রস্তাবটি বিদ্যমান নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনীর পরিপূরক শক্তি হিসাবে একটি ন্যাশনল আর্মি প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা, কাঠামো এবং সুবিধার রূপরেখা দেয়। এই উদ্যোগটি দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী প্রতিরক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানোর পথ অনুসন্ধান করে।

বাংলাদেশ জটিল ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব দ্বারা বেষ্টিত, বিশেষত ভারত এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলোর বেষ্টনি। একটি ন্যাশনল আর্মি দেশের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করবে এবং সম্ভাব্য বাহ্যিক হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

বাংলাদেশে তরুণদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, দেশটি জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তরুণ নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে জনগণকে লাভবান করতে কাজে লাগাতে পারবে। খণ্ডকালীন বা অন-কল কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি ন্যাশনল আর্মি প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বৃদ্ধিতে একটি বৃহৎ স্থায়ী সেনাবাহিনী, যা একটি ব্যয়বহুল ব্যবস্থার বিকল্প হবে। ১৫-২০ বছর বয়সী ছাত্রছাত্রীদের নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণের উদ্যোগ তাদের আর্থিক সহায়তা এবং দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ, বিশেষত গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোকে উপকৃত করবে। এছাড়াও নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনীর কর্মতৎপরতার পরিপূরক হয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জনসাধারণের জরুরি অবস্থা এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোতে দ্রুত সাড়া দিতে পারবে এই ন্যাশনল আর্মি। এই বাহিনী স্থানীয় সম্প্রদায়কে ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত করলে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।

এই বাহিনীতে ক্লাস ৮/৯ থেকে ১১/১২ পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা (১৫-২০ বছর) যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ৬-১২ মাসের প্রশিক্ষণকালে প্রাথমিক সামরিক, সামাজিক নেতৃত্ব এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ১০ বছরের জন্য নিয়োগ তবে ৩-৫ বছর পরে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সুযোগ থাকবে।

প্রতি ইউনিটে ৫০০ ছাত্রের একটি ব্যাটালিয়ন যা ১০০ সদস্যবিশিষ্ট পাঁচটি কোম্পানিতে বিভক্ত। প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম এবং ছোট অস্ত্রের সুরক্ষিত সংরক্ষণ (প্রশিক্ষণের সময় লাইভ গুলি থাকবে না)। নিয়মিত সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা তত্ত্বাবধান এবং উঁচু কর্মক্ষমতা সম্পন্ন সদস্যদের থেকেও নেতৃত্বের সুযোগ থাকা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে পরিচালিত হলেও নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনী থেকে আলাদা হবে। প্রশিক্ষিত তালিকাবদ্ধ ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রতি মাসে প্রাপ্ত ভাতার পরিমান ১০,০০০ টাকা (৮৩ ডলার)।

জাতীয় প্রতিরক্ষা শক্তিশালীকরণে নিয়মিত সামরিক বাহিনীর সহায়ক একটি প্রশিক্ষিত রিজার্ভ বাহিনী গঠন করা যা সীমান্ত নিরাপত্তাকে জোরদার করবে। অন্যদিকে তরুণরা নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা এবং সংকটকালীন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিখবে এতে তাদের মধ্যে জাতীয় গৌরব এবং দায়িত্ব পালনের অনুভূতি উপভোগ করবে। বিশেষত গ্রামীণ এলাকার অংশগ্রহণকারী পরিবারের জন্য আর্থিক সুবিধা আর্থিক বৈষম্য কমাবে। বিভিন্ন জাতিগত, আঞ্চলিক এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য এবং সহযোগিতাকে উৎসাহিত করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় তাৎক্ষণিক সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকবে, এর ফলে জীবন এবং সম্পদের ক্ষতি কমবে।

পরিশেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য ন্যাশনল আর্মি প্রতিষ্ঠা করা একটি দূরদর্শী উদ্যোগ হতে পারে, যা প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি এবং উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করবে এবং জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা (অগ্রগতি) নিশ্চিত করবে। সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণকে শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করে তরুণদের সম্পৃক্ত করলে দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা ও সমৃদ্ধ হবে।

মেজর অব আবদুল মান্নানের লিখিত প্রস্তাবের উপর বৈঠকে উপস্থিত ২৬ জন আলোচক আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন।

ন্যাশনল আর্মি গঠনের প্রস্তাবটি সরকারের নিকটে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন যা নির্বাচন পূর্বকালীন সংস্কারের অংশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দাবি রাখে।