জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের সরগরম হয়ে উঠেছে জামালপুরের বকশীগঞ্জ। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে পৌরসভা নির্বাচনের মাঠ।
বকশীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা।এবারের নির্বাচন হবে তালুকদার পরিবার ও সওদাগরের পরিবারের অস্তিত্বের লড়াই। অপরদিকে এই দুই পরিবারের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে মেয়র হতে চান বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফকরুজ্জামান মতিন।মেয়র পদে ৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় জমজমাট হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ।এই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মেয়র পদে কে জিতবেন তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ২৩ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর বকশীগঞ্জ পৌর শহর সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের হাট বাজার গুলোতে চায়ের কাপে ঝড় উঠেছে। কেমন মেয়র , কে হবে আগামির মেয়র তা নিয়ে চলছে না আলোচনা-সমালোচনা। বকশীগঞ্জ পৌরসভা ২০১৩ সালে গঠন হলেও ২০১৯ সালে প্রথম বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বকশীগঞ্জ পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম সওদাগর প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। আগামি ৯ মার্চ পৌরসভার দ্বিতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের ঝালাই দিতে বিশ্লেষণ করছেন ভোটাররা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে বর্তমান মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর (জগ) প্রতীক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবুল তালুকদার (মোবাইল ফোন), বকশীগঞ্জ সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত সদস্য সচিব ফকরুজ্জামান মতিন (নারিকেল গাছ) ও বকশীগঞ্জ সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজের সাবেক ভিপি আনোয়ার হোসেন বাহাদুর (রেল ইঞ্জিন) প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দি¦তা করছেন। তবে এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ায় উল্টে যেতে পারে হিসাব নিকাশ। এই নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবণা রয়েছে। কে মেয়র হবে তা নিয়ে এখনই মুখ খুলছেন না ভোটাররা। প্রার্থীরা মাঠে জানান দিতে ঘরোয়া প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন মেয়র সহ কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়ী হতে ভোটারদের ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে কাছে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ নিজের ইমেজকে কাজে লাগাতে ভোটারদের সামনে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করছেন।
পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভোটাররা জানান, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত চিন্তা করেই তারা পৌর পিতা নির্বাচন করতে চান। যাকে দিয়ে পৌরবাসীর সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে, নাগরিক সেবা নিশ্চিত হবে তাকেই মেয়র পদে ভোট দিবেন সাধারণ ভোটাররা। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে নির্বাচনী দামামায় জড়িয়েছেন প্রার্থীরা। শুধু মেয়র পদেই নয় কাউন্সিলর প্রার্থীরাও প্রচারণায় পিছিয়ে নেই। তারাও তাদের মত করে এলাকায় ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। সেই দামামায় কে বিজয়ী হবেন সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বকশীগঞ্জ পৌরবাসী। মেয়র পদে শহরের সওদাগর পরিবারের সন্তান বর্তমান মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর এবারও জগ প্রতীক নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। তিনি প্রথম বার মেয়র হয়ে বকশীগঞ্জ পৌরসভাকে ‘গ’ শ্রেণি থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত করা সহ রাস্তা-ঘাট, রাস্তায় আলোকসজ্জা করেছেন। তিনি তার উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে আবারও তাকে নির্বাচিত করতে ভোটারদের কাছে অনুরোধ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে তরুন ও নারী ভোটারদের টার্গেট করে নিয়মিত গণসংযোগ, নির্বাচনী সভা করে যাচ্ছেন এই মেয়র প্রার্থী। যেসব উন্নয়ন কাজ অসমাপ্ত রয়েছে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলে সেগুলোকে প্রধান্য দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। এলাকায় যে উন্নয়ন করেছেন সেটা বিবেচনা করে ভোটাররা আবারও মেয়র পদে নির্বাচিত করবেন বলে জানান মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম সওদাগর। বকশীগঞ্জ পৌর শহরের তালুকদার পরিবারের সন্তান ইসমাইল হোসেন বাবুল তালুকদার এবার মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত বাবুল তালুকদার প্রার্থী হওয়ায় পাল্টে যাচ্ছে ভোটার হিসাব-নিকাশ। তিনি তার কর্মী সমর্থক নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ভোটারদের মধ্যে সাড়া ফেলেছেন মেয়র প্রার্থী ইসমাইল হোসেন বাবুল তালুকদার। তিনি তার পরিবারের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ।
এবারের নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মত প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত সদস্য সচিব ও সাবেক চেয়ারম্যান ফকরুজ্জামান মতিন। তিনি এর আগেও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বর্তমান মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগরের কাছে হেরে যান। বিএনপির বেশির ভাগ নেতা কর্মী নিয়ে মাঠে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়ে যাচ্ছেন ফকরুজ্জামান মতিন। তিনি প্রার্থী হওয়ায় বিএনপিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোন সিদ্ধান্ত না থাকায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন অনেক নেতা কর্মী। তার দাবি ভোটাররা ভোট দিতে পারলে তার নারিকেল গাছ প্রতীকে ভোট বিপ্লব ঘটবে। এছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি আনোয়ার হোসেন বাহাদুর তার সমর্থকদের নিয়ে রেল ইঞ্জিন প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন। তবে কে হাসবেন শেষ হাসি তার জন্য ভোটাররা অপেক্ষা করছেন অধীর আগ্রহে। এজন্য আগামি ৯ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুণছেন বকশীগঞ্জ পৌরবাসী। উল্লেখ্য, আগামি ৯ মার্চ বকশীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডের ১২ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৩৫ হাজার ৫১৮ জন ভোটার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এ তাদের ভোট প্রদান করবেন।