বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি : জামালপুরের বকশীগঞ্জে পৌরসভা নির্বাচনে সাবেক মেয়রের পক্ষে নির্বাচন করায় তিন সমর্থককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে বতর্মান মেয়রের ভাই ফরহাদ হোসেন মনিরের বিরুদ্ধে।
এঘটনায় এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে অতিরিক্ত মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার (২০ এপ্রিল) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন দেওয়ানগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন কান্তি চৌধুরী ও বকশীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বকশীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগরের পক্ষে কাজ করেন পৌর এলাকার টিকর কান্দি গ্রামের সুমন মিয়া , শাহীন মিয়া ও শাউন মিয়া।
সাবেক মেয়র নজরুল ইসলামের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করায় শাহীন ও অন্যান্যদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন বর্তমান মেয়র ফকরুজ্জামান মতিন ও তার সমর্থকরা।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় শাহীন ও সুমন মিয়ার নেতৃত্বে জুয়া খেলা হয় তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে মারধর করেন বর্তমান মেয়র ফকরুজ্জামান মতিনের ছোট ভাই ফরহাদ হোসেন মনির সহ কয়েকজন। তারা মার খেয়ে বকশীগঞ্জ শহরে আসার পথে তালতলা নামক স্থানে তাদের পথ আটকিয়ে পুনরায় মারধর করেন পৌর মেয়র মতিনের সমর্থকরা।
মারধরের শিকার সুমন , শাহীন মিয়া ও শাওন মিয়া তিন জনই সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগরের নির্বাচনী কর্মী ছিলেন। পরে তাদের আহতবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরিস্থিতি খারাপ দেখে গুরুতর আহত শাহীন মিয়া (৩০) কে শুক্রবার রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। সুমন ও শাওন মিয়া বর্তমানে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে নিজ কর্মীদের মারধরের খবর পেয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগরের সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে শহরের খাদ্য গুদামে সামনে অবস্থিত বর্তমান মেয়র ফকরুজ্জামান মতিনের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চেয়ার, টেবিল ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ করেন বর্তমান মেয়রের সমর্থকরা।
এঘটনাকে কেন্দ্র করে পৌর শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ কৌশলে দুই পক্ষকেই সড়িয়ে দেন। একারণে বকশীগঞ্জ পৌর শহরে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উদ্ভুত পরিস্থিতি এড়াতে শহরে পুলিশ মোতায়েন সহ টহল জোড়দার করা হয়েছে। এদিকে পৌর মেয়রের অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জামালপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়ানগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন কান্তি চৌধুরী ও ওসি আবদুল আহাদ খান শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
হামলার শিকার হওয়া সুমন মিয়া বলেন, সাবেক মেয়রের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করায় মেয়র মতিন ও তার ভাই আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। আমাকে ফাঁসাতে তারা আমার ওপর জুয়ার খেলার অপবাদ দিয়ে বেদম মারপিট করেন। আমি এর বিচার চাই।
বকশীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর বলেন, আমার তিনজন কর্মী মতিনের এলাকার হয়েও আমার পক্ষে কাজ করেছে এটাই তাদের অপরাধ। তাই বর্তমান মেয়রের ছোট ভাই মনির ও তার সমর্থকরা আমার কর্মীদের বেধড়ক পিটিয়েছে। পাশাপাশি মেয়র মতিনের অফিস নিজেরাই ভাঙচুর করে আমার কর্মীদের ওপর দোষ দিচ্ছে।
বকশীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফকরুজ্জামান মতিন বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
শুক্রবার রাতে তারই ধারাবাহিকতায় আমার নিজ অফিস ভাঙচুর করে সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগরের ক্যাডার বাহিনী। তাই এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বকশীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান জানান, শুক্রবার রাতে সাবেক ও বর্তমান মেয়রের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় পুলিশ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। সাবেক মেয়রের সমর্থকদের মারধরের ঘটনা ও বর্তমান মেয়রের অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দুই পক্ষকেই শান্ত থাকতে বলা হয়েছে।