ইসলামপুর সংবাদদাতা : পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধানে আর্সেনিক হ্রাসকরণ প্রযুক্তির মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে “নিরাপদ ও পুষ্টিকর ধান উৎপাদনের জন্য প্রজনন ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রকল্প”কমিটি মৃত্তিকা বিজ্ঞান মাঠ গবেষণাগারে মাঠ দিবস কর্মসূচির আয়োজন করেন।
আয়োজিত মাঠ দিবস কর্মসূচিতে বাকৃবি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মোশাররফ উদ্দিন ভূঁইয়া, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল অতিরিক্ত পরিচালক,ড. সালমা লাইজু, ঝধঘজরপব প্রকল্প উপ-প্রকল্প পরিচালক, প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন সুমন, বাকৃবি মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ প্রধান ড. মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, জাইকা- বাংলাদেশ প্রকল্প সমন্বয়কারী রিউচি কাটসুকি, নিরাপদ ও পুষ্টিকর ধান প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও বাকৃবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি ফেলো, মো. সোহেল রানা প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। এতে বাকৃবির শিক্ষকবৃন্দ, পিএইচডি শিক্ষার্থী এবং মাঠ পর্যায়ের প্রান্তিক কৃষকবৃন্দ এতে অংশগ্রহণ করেন৷
বক্তারা বলেন- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ দ্বারা পরিচালিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় ৩ দিন ভিজানো এবং ৪ দিন শুকানো (৩ঋ৪উ) ভিত্তিক একটি পরিবর্তিত পর্যায়ক্রমিক সেচ কৌশল চালের মধ্যে অজৈব আর্সেনিকের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে।
বাংলাদেশের অনেক এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি আর্সেনিক দ্বারা দূষিত। অবিরাম জলাবদ্ধতার (ঈঋ) অধীনে ধান চাষ করলে চালের মধ্যে এই বিষাক্ত উপাদানের মাত্রা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, শীষ গঠনের সময় ৩ দিন ভিজানো এবং দিন শুকানো (৩ঋ৪উ) সেচ পদ্ধতি কার্যকর হলেও, নিষ্কাশন সুবিধাবিহীন ক্ষেতে এটি কার্যকর হবে কিনা তা স্পষ্ট ছিল না। বাংলাদেশে টানা তিনটি বোরো মৌসুমে গবেষকরা ৩ঋ৪উ ও ৩ঋ৭উ (৩ দিন জলাবদ্ধতা, ৭ দিন নিষ্কাশন) মধ্য-মৌসুমি নিষ্কাশন (গউ) সহ ও ছাড়া, পরীক্ষা করেন। এছাড়াও, এসব পদ্ধতির ফলাফল তুলনা করা হয় অডউ এবং প্রচলিত অবিরাম জলাবদ্ধতার (ঈঋ) সঙ্গে। গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল ৩ঋ৪উ পদ্ধতিকে এমনভাবে উন্নয়ন করা, যাতে তা নিষ্কাশন সুবিধা ছাড়াই প্রয়োগযোগ্য হয় এবং এর প্রভাবে চালের অজৈব আর্সেনিকের মাত্রা ও সেচের পানির চাহিদা হ্রাস পায় কিনা তা যাচাই করা।
মাঠ পর্যায়ে ৩ঋ৪উ পদ্ধতির ৪ দিনের নিষ্কাশন সময়ে মাটির আর্দ্রতা প্রায় ৫% হ্রাস পায় এবং রিডক্স পোটেনশিয়াল বেড়ে ১৫০-৫০০ সা পর্যন্ত পৌঁছে, যা একটি অক্সিডেটিভ পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং এতে গাছের আর্সেনিক শোষণ কমে যায়। ৩ঋ৪উ পদ্ধতিতে উৎপাদিত চালে অজৈব আর্সেনিকের মাত্রা অবিরাম জলাবদ্ধতার তুলনায় সর্বোচ্চ ৪০% পর্যন্ত কমে। ধানের ফলন অপরিবর্তিত থাকে। পাশাপাশি, এই পদ্ধতির মাধ্যমে সেচের জন্য ব্যবহৃত পানি ৬৫-৮০% পর্যন্ত সাশ্রয় সম্ভব।
এছাড়াও সীমিত সম্পদেও কৃষকরা ৩ঋ৪উ পদ্ধতি ব্যবহার করে ফলন ব্যাহত না করেই নিরাপদ চাল উৎপাদন করতে পারেন। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার শুধু আর্সেনিকের ঝুঁকি কমাতেই নয়, বরং সেচের পানির চাহিদাও ব্যাপকভাবে হ্রাস করে, ফলে ভূগর্ভস্থ পানিদূষণপ্রবণ অঞ্চলে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও টেকসই ধান উৎপাদনর এক বাস্তবভিত্তিক সমাধানসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আরোকপাত করা হয়।
বাকৃবিতে ধানে আর্সেনিক হ্রাসকরণ প্রযুক্তির মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত
