ভারতের ব্যাপক বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকরের বিরোধিতা করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ভোটের আগে বিজেপি বিভাজনের খেলা খেলতেই এটা করেছে। তারা আবার বাংলাকে ভাগ করতে চায়। বাঙালিকে তাড়াতে চায়। তবে তার রাজ্যে এই আইনের বাস্তবায়ন হতে দেবেন না বলেও হুঙ্কার দিয়েছেন মমতা।
মঙ্গলবার হাওড়ায় প্রশাসনিক সভায় অংশ নিয়ে জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘একটা কথা মন দিয়ে শুনে নিন! আপনারা কেউ নাগরিকত্বের জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করবেন না। করলেই আপনাদের নাগরিকত্ব চলে যাবে। আপনাকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলবে। আপনার সম্পত্তি কেড়ে নেবে। ওই ফাঁদে খবরদার পা দেবেন না!’’
দেশটির নতুন এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ২০১৯ সালে পাস হয়। তারপর সোমবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকরের বিষয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বিজ্ঞপ্তি জারির পরপরই নবান্ন থেকে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন মমতা। মঙ্গলবার হাওড়ার সরকারি কর্মসূচি থেকে কার্যত গর্জে উঠেছেন তিনি। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের এই আইন আদৌ বৈধ কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা। তার কথায়, ‘‘এটা বৈধ কি না, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কোনও ক্ল্যারিটি (স্বচ্ছতা) নেই। টোটাল ভাঁওতা।’’
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, কেন্দ্রের আইন বাস্তবায়িত হওয়া কোনও রাজ্য সরকার রুখতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বাংলার কারও নাগরিকত্ব যেতে দেবেন না। সবাইকে তিনি আশ্রয় দেবেন। মমতা ছাড়া সিএএ বলবৎ করার ক্ষেত্রে বামশাসিত কেরালাও একইভাবে ‘কট্টর’ অবস্থান নিয়েছে।
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও বলেছেন, তার রাজ্যে সিএএ বাস্তবায়িত হতে দেবেন না। এ বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বলছে, কেরালা ও বাংলা যে এই অবস্থান নিতে পারে, তা কেন্দ্রীয় সরকরারের ধারণার মধ্যেই ছিল। সে কারণেই এই আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বিশেষ ভূমিকার সুযোগ রাখা হয়নি।
হাওড়ার সভায় মমতা বলেছেন, ‘‘ভোটের আগে বিজেপি বিভাজনের খেলা খেলতেই এটা করেছে। তা হলে চার বছর বসে রইল কেন? তারা আবার বাংলাটাকে ভাগ করতে চায়। বাঙালিকে তাড়াতে চায়।’’
এ প্রসঙ্গে মমতা ২০১৯ সালে আসামের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘‘২০১৯ সালে আসামে এনআরসির নামে ১৯ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৩ লাখই বাঙালি হিন্দু।’’
ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, বিজেপি মেরুকরণের লক্ষ্যেই সিএএ কার্যকর করার জন্য ভোটের আগের সময়কে বেছে নিয়েছে। তারা বলছেন, পাল্টা মেরুকরণের লক্ষ্যেই পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও কেরালায় সিপিএম তথা বামরা তার কট্টর বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং কেরালায় সিপিএমের উদ্দেশ্য অভিন্ন— সংখ্যালঘু ভোটকে তাদের দিকে ধরে রাখা। পশ্চিমবঙ্গে যেমন সংখ্যালঘু বলতে মুসলিমরাই বেশি, কেরালায় মুসলিমদের পাশাপাশি খ্রিস্টানরাও রয়েছেন।
মমতা বলেছেন, এই আইন নিয়ে তিনি আইনজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তার কথায়, ‘‘এটা করা হয়েছে মানুষকে হয়রানি করার জন্য। আর দুই-তিনটা সিট জেতার জন্য।’’ পাশাপাশি অভয়ও দিতে চেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘তাদের আইনটাকে সরিয়ে ফেলে দিন। এখানে বহাল তবিয়তে থাকবেন। কোনও ভাঁওতায় পা দেবেন না। তা হলে এ কূল-ও কূল দু’কূল যাবে। জমিদারদের বিরুদ্ধে আমি আপনাদের পাহারাদার।’’
সিএএ ‘‘ফরম’’ নিয়েও কথা বলেছেন মমতা। তার কথায়, ‘‘ফরমে এক জায়গায় লেখা আছে, বাবার বার্থ সার্টিফিকেটের কথা। যাদের এখন ৫০-৬০ বছর বয়স, তাদের সবার বাবার বার্থ সার্টিফিকেট আছে? আমি তো আমার বাবা-মায়ের জন্মদিনই জানি না।’’