বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার পর্যায়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে সরকার। প্রথম পর্যায়ে প্রায় সাতটি মিশনে নতুন দূত নিয়োগ দিতে যাচ্ছে ঢাকা। এরমধ্যে ছয়টি মিশনে নতুন দূত নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। আর এটি কার্যকর হলে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা হবে শীর্ষ কূটনীতিকদের পদে বড় ধরনের পরিবর্তন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, প্রথম পর্যায়ে ইতালি, কানাডা, পোল্যান্ড, গ্রিস, কুয়েত এবং থাইল্যান্ডে নতুন হাইকমিশনার/রাষ্ট্রদূত চূড়ান্ত করেছে সরকার। গুরুত্বপূর্ণ এ মিশনগুলোর মধ্যে কানাডা এবং গ্রিসে পাঠানো হচ্ছে দুই নারী রাষ্ট্রদূতকে। যারা বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে ঢাকার হয়ে দূতিয়ালি করছেন।
অন্যদিকে ইতালি এবং থাইল্যান্ডে পররাষ্ট্র ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের তিন কর্মকর্তাকে প্রথম দূত করে পাঠানো হচ্ছে। আর কুয়েতে নন কূটনীতিক তথা এক মেজর জেনারেলকে দূত করে পাঠাচ্ছে ঢাকা। এছাড়া বর্তমানে জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রধানকে পরিবর্তনের কথা থাকলেও, তা এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রদূত পেশাদার কূটনীতিক নাহিদা সোবহানকে কানাডায় বাংলাদেশের পরবর্তী হাইকমিশনার হিসেবে পাঠাচ্ছে সরকার। তিনি বর্তমানে চুক্তিতে হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করায় হাইকমিশনার খলিলুর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। দূত হিসেবে নাহিদার এটি দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট হবে।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ব্রুনাইয়ে হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করা নাহিদা রহমান সুমনাকে দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্টে গ্রিসে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠাচ্ছে সরকার। তিনি বর্তমান রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিক আসুদ আহমেদের পিআরএল চলতি বছরের এপ্রিলে শুরু হওয়ার কথা।
পররাষ্ট্র ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের পেশাদার কূটনীতিক খোরশেদ আলম খাস্তগীরকে পোল্যান্ডে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বর্তমানে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনে উপ-রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন। পোল্যান্ডে তিনি রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
একই ব্যাচের চৌকস কূটনীতিক বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহু-পক্ষীয় অর্থনৈতিক বিষয়াবলীর দেখাশোনা করা মহাপরিচালক ফাইয়াজ মুরশিদ কাজীকে থাইল্যান্ডে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। তিনি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ আব্দুল হাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়া ২০তম ব্যাচের পেশাদার আরেক কূটনীতিক বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ. টি. এম. রকিবুল হককে ইতালিতে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হচ্ছে। তিনি বর্তমান রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। জ্যৈষ্ঠ এ কূটনীতিকের চলতি মাস থেকে পিআরএল শুরু হওয়ার কথা।
আর কুয়েতে রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মো. আশিকুজ্জামানের মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের মে মাসে। তার জায়গায় প্রেষণে নতুন রাষ্ট্রদূত করে মেজর জেনারেল তারেক আহমেদকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এসব প্রস্তাবিত দূতদের গ্রহণের বিষয়ে স্বাগতিক দেশগুলোতে এগ্রিমো পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে দূতদের পাঠানো প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এদিকে, টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করার পর ফেব্রুয়ারিতে ১০ রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে ছয়টি দেশে নতুন দূত পাঠাচ্ছে সরকার। বাকি চারটির মধ্যে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ সুফিয়ুর রহমানকে ফের রাষ্ট্রদূত করার কথা শোনা যাচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যখন চুক্তিতে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের বিষয়ে একট্রা এরমধ্যে ১০ দূতের মধ্যে জার্মানিতে রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার এবং জাপানে রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া গত ২৪ মার্চ পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. রুহুল আলম সিদ্দিকীকে ঢাকায় বদলি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকার এক জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, দূত পরিবর্তনের বিষয়টি রুটিন কাজ। নতুন করে কেউ রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার হবেন। আবার কেউ হয়তো দ্বিতীয় স্টেশনে যাবেন। চলতি বছরে বেশ কয়েকটি মিশনে পরিবর্তন হওয়ার কথা। চুক্তিতে থাকা ও অবসরে যাবেন এমন আরও সাত রাষ্ট্রদূতের চাকরি আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। স্বাভাবিকভাবে এসব স্টেশনেতো নতুন কাউকে পাঠাতে হবে বা যারা একটা অ্যাসাইনমেন্ট করেছেন তাদের অন্য অ্যাসাইনমেন্টে পাঠানো হয়, এটাই হয়ে আসছে।