মোহাম্মদ আলী : শালিস দরবারে, পুলিশ ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ সাংবাদিকদের কাছে বার বার সত্য কথা বলায় জন্মদাত্রী মায়ের আহার বন্ধ করে দিয়েছেন শিক্ষক ছেলে। শুধু তা-ই নয়, তাকে ঘর থেকেও বের করে দিয়েছেন তিনি। দুমুঠো খাবার ও একটু আশ্রয়ের জন্য সত্তোর্ধ্ব এই বৃদ্ধা এখন অন্যের দ্বোয়ারে দ্বোয়ারে ঘুরে বেড়ান।
অতিসম্প্রতি, সংবাদ সম্মেলনে এসে বড় ছেলের সম্পর্কে এমন তথ্য দিয়েছেন মা মাছুমা বেগম (৭৫)। জানা যায়, জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার সূর্যনগর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী, মাছুমা বেগমের দাম্পত্য জীবনে ২ ছেলে ১ মেয়ে। সন্তানদের ছোট রেখেই মারা গেছেন দরিদ্র স্বামী। তার পক্ষে ৩ ছেলে মেয়ের আহার ঝুটানো সম্ভব না। তাই, অনেক বছর আগে পাশের উপজেলা দেওয়ানগঞ্জের কলমাকান্দার নিঃসন্তান আঃ মতিনের কাছে দত্তক দিয়েছিলেন বড় ছেলে (বর্তমানে বকশিগঞ্জ সারমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক) মোঃ রৌশন আলম হাফিজুল হককে। প্রায় ৩০ বছর পর হঠাৎ করে দত্তক দেওয়া সেই ছেলে বাড়িতে ফিরে আসেন। কোনো রকম কারণ খোঁজা ছাড়াই আবারও মা তার ছোট্ট ঘরে ঠাঁই দেয় ছেলেকে। ছোট ভাই আবুল হাশেম ঘরের মাঝখানে চাঁদর ঝুলিয়ে থাকতে দেয় বড় ভাইকে। খাওয়া দাওয়ার দায়িত্বও পড়ে দিনমজুর ছোট ভাইয়ের কাঁধে। এভাবে চলতে চলতে ২০০০ সালে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে চাকুরি হয় হাফিজুল হকের। তারপর ছোট ভাই আবুল হাশেমের বাড়ির জায়গায় বিক্রি করে পাশের পাড়ায় তার নামীয় জায়গা খরিদ করে তাতে বাড়ি করার পরামর্শ দেন বড় ভাই। তার কথামতো আবুল হাশেম প্রতিবেশীর কাছে বাড়ির জায়গায় বিক্রি করে বিক্রিত অর্থ (৮ লাখ টাকা) তুলে দেন হাফিজুলের হাতে। কথা থাকে সময়মতো তার নামে জমি রেজিস্ট্রি করে দিবেন।
কিন্তু, কয়েক বছরেও তিনি তা না করে উল্টো ছোট ভাইয়ের দুইটি ঘর দখল করে নেন। তাতে আবুল হাশেমের পরিবার আপত্তি বা বাঁধা দিলে দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব কলহের সৃষ্টি হয়। হয় মামলা মোকদ্দমা। চলে শালিস দরবার। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। এসব কার্যক্রমে প্রতিটি ক্ষেত্রে মা মাছুমা বেগম, বড় ছেলে হাফিজুল, ছোট ছেলে হাশেমকে জমি লিখে দিবেন ৮ লাখ টাকা নিয়েছে মর্মে স্বাক্ষী দেওয়ায় রাগ করে মায়ের খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেন হাফিজুল । শুধু তা-ই নয়, এক পর্যায়ে বৃদ্ধা মাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন তিনি। দুমুঠো খাবার ও একটু আশ্রয়ের জন্য সত্তোর্ধ্ব এই বৃদ্ধা এখন অন্যের দ্বোয়ারে দ্বোয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, হাফিজুল হক একজন খারাপ লোক। সে স্বার্থের মোহে মা ভাইয়ের উপর অত্যাচার করছে। তিনি একজন ইমাম ও একজন শিক্ষক হয়ে কিভাবে এহেন গর্হীত কাজ করতে পারছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।
তবে, সবার অভিযোগ অস্বীকার করে, সবাইকে মিথ্যাবাদী বলে তিনি বলেন, আমি, আমার মা ভাই ও এলাকারবাসীর ষড়যন্ত্রের শিকার। তারা প্রতিহিংসা বশতঃ আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনছেন। আসলে আমার ছোট ও তার পরিবার মাকে পুঁজি করে আমার জায়গা জমি দখল করে বসে আছে।
মায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, মা আগেও অন্যের বাড়ি ভিক্ষা করে খেতেন এখনো খান। এটা আর নতুন কি?