মোহাম্মদ আলী : ভাবির সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় স্ত্রীকে হত্যা করেছে স্বামী ও তার পরিবার! বৃহস্পতিবার, জামাই ও তার পরিবার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে জামালপুর আদালতে মামলা করেছেন শ্বশুর।
মামলাসূত্রে জানা যায়, ২ বছর আগে জেলার ইসলামপুর উপজেলার চরপুটিমারি ইউনিয়নের আগ্রাখালি গ্রামের দরিদ্র কৃষক শাহ আলী তার মাদ্রাসায় পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে শেফালীকে বিয়ে দেন একই উপজেলার পুড়ারচর গ্রামের হাজি মরহুম মগর মন্ডলের ছোট ছেলে, হাফেজ সামছুর রহমানের শাহিনের সাথে। বিয়ের ৬ মাস যেতে না যেতেই শাহিনের ভাবির সাথে তার পরকীয়াকে কেন্দ্র করে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এমতবস্থায় মেয়ের সংসারের শান্তি রক্ষাই বাবা শাহ আলী তার গ্রামের মুরুব্বীদের নিয়ে জামাইয়ের গ্রামের মুরুব্বীদের সাথে শালিস করেন। শালিসিতে জামাই আর কোনোদিন এমন নেক্কারজনক কাজ করবে না বলে তওবা করায়, সেবারের মতো বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। এরইমধ্যে শেফালী ও শাহিনের দাম্পত্য জীবনে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম নেয়। যার বয়স ১০ মাস। কিন্তু, কয়লার শত ধূইলেও যায় না ময়লা।
ঘটনার দিন ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যার পর স্বামী শাহিনকে তার ভাবির সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে শেফালী। ঐদিন সে স্বামীর অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় তাকে বেদম মারপিট করে স্বামী শাহিন, তার বড় ভাই হাবিবুর রহমান, ভাবি সালমা খাতুন, মা হাজেরা বেগম, বোন মর্জিনা খাতুন, ও ছোট ভাই হাসেম আলী। তাদের মারপিটে শেফালী অজ্ঞান হয়ে পড়লে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে তার মুখে বিষ ঢেলে দেয় তারা। এঘটনায় দায়মুক্তি এড়াতে তারা মৃতপ্রায় গৃহবধূ শেফালীকে প্রথমে ইসলামপুর হাসপাতালে পরে জামালপুর জেলা হাসপাতালে নেয়। এর কিছুক্ষণ পরেই কর্তব্য চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরেরদিন ময়নাতদন্তের পর গৃহবধূ শেফালীকে তার বাপের বাড়িতে সমাহিত করা হয়েছে। এব্যাপারে নিহতের বাবা, মামলার বাদী, মোঃ শাহ আলী বলেন, হাফেজ আলেম দেখে বড় আশা ও বিশ্বাস নিয়ে বিয়ে দিয়েছিলাম আমার মেয়েকে। সেই জামাই যে আমার এমন চরিত্রহীন লম্পট খুনী হবে ভাবতে পারিনি। ঘটনার দিন ভাবির সাথে জামাইকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে তার প্রতিবাদ করলে তারা আমার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে তার মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছে।
নিহত শেফালীর দাদা আক্রাম হোসেন বলেন, ময়নাতদন্তের সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। লাশের দেহের বিভিন্ন অংশে জখম ও কর্তব্যরত চিকিৎসকের মতে, আমি নিশ্চিত এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
সাবেক মেম্বার হাবিবুর রহমান বলেন, শেফালীর বিয়ের ৬মাস পর থেকেই স্বামীর চারিত্রিক দোষের অভিযোগ আসতে থাকে। এক পর্যায়ে আমরা গ্রামের মুরুব্বীরা শালিসি করতে সে গ্রামে যাই। বৈঠকে শেফালীর স্বামী শাহিন ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে এমন কাজ করবে না মর্মে তওবা করে। কিন্তু, সে তওবায় টিকতে পারে নাই। পরিশেষে চারিত্রিক দোষ ঢাকতেই সে তার স্ত্রীকে খুন করেছে, বলে আমার বিশ্বাস। আগ্রাখালি নতুনপাড়া মসজিদের ঈমাম, মাওলানা এমদাদ বলেন, ঘাতক শাহিন একজন দ্বীনি আলেম হলেও তার কথা বার্তায় আচার আচরণে দ্বীন ছিল না। সে যে ঘটনা ঘটিয়েছে তাতে সকল আলেম সমাজের মুখে কালিমা লেপন করেছে।
এলাকাবাসীর পক্ষে হাজি আঃ রহিম, ন্যায় বিচারের স্বার্থে শেফালী হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অপরদিকে আসামিদের মতামত জানতে পুড়ারচরে শাহিনদের বাড়িতে গেলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী জানান, তারা কেউ বাড়িতে নেই। সবাই পলাতক।