ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয়, তারা শুধু স্বৈরশাসক হাসিনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পল্লী চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, তারা (ভারত) আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব চায় না, বন্ধুত্ব চায় শুধু শেখ হাসিনার মতো একজন ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসু স্বৈরশাসকের সঙ্গে। বাংলাদেশের জনগণকে ওরা পছন্দ করে না। শেখ হাসিনা থাকলে বাংলাদেশে তারা মাতবরি করতে পারে, আধিপত্য বিস্তার করতে পারে।
ভারতে ইলিশ পাঠানো নিয়ে একজন উপদেষ্টার বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে আবেগ দিয়ে কথা বললে তো হবে না। আমি এ নিয়ে বলতে পারি, বাঙালি জনগোষ্ঠী ভারতেও আছে। তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গাপূজা। এ সময় ইলিশ মাছ একটা বড় উপাদান হিসেবে কাজ করে আমরা জানি। আমরা কোনোদিনই ইলিশ মাছ রপ্তানিতে বাধা দিইনি। আমরা নিজেরাই মাঝারি থেকে ছোট ইলিশ এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে কিনি। বাড়তি দাম মেনে নিয়েও আমরা কিন্তু ইলিশ রপ্তানি করি। আমাদের অর্থ উপদেষ্টা আবেগের প্রশ্নের কথা বলেছেন। একই সময় যখন আমরা দেখছি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, সীমান্তে বাংলাদেশি কাউকে দেখলে পা উপরের দিকে ঝুলিয়ে রেখে শাস্তি দেওয়া হবে। তখন তো আমাদের মধ্যে আবেগ তৈরি হবে।
খালেদা জিয়া দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি মন্তব্য করে দলের এই মুখপাত্র বলেন, দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তিনি কখনো আপস করেননি। আমাদের গোটা জাতি তো নিজ দেশ, নিজ রাষ্ট্রের বিষয়ে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। যে সময়ে আপনারা ইলিশ মাছ রপ্তানির কথা বলছেন, রপ্তানি হতেই পারে, কিন্তু যখন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঝুলিয়ে রাখার কথা বলেন, তখন আমি কেন বলব না, আমরা ইলিশ মাছ দেব না।
তিনি বলেন, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য তো সব সময় হয়ে এসেছে। কিন্তু আবেগ তখনই আসে, যখন আমাদের সঙ্গে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করে। তখন তো আমরা বলবই, আমরা ইলিশ মাছ কেন দেব? পেঁয়াজ আমরা আমদানি করি ভারত থেকে। ভারতে যখন সংকট হয়, তখন তো তারা পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। রপ্তানির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। তারা কিন্তু আমাদের এক ইঞ্চিও ছাড় দেয় না।
‘নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বেশি সময় লাগার কথা নয়’ এমন মন্তব্যও করেন রিজভী। তিনি বলেন, সংবিধানকে তারা (আওয়ামী লীগ) কেটে নিজেদের মতো করে একটা মুড়ির ঠোঙা বানিয়েছিল। এখন রাষ্ট্রীয় সংবিধানের আসল সারমর্ম; জনগণের নাগরিক অধিকার, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে যতটুকু ক্ষমতা দেওয়া দরকার এবং নির্বাচন কমিশনে যতটুকু স্বাধীনতা নিশ্চিত হওয়া দরকার, সেই সমস্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে বেশি সময় লাগার কথা না।
অনুষ্ঠানে খুন-গুমের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামিম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম। উপস্থিত ছিলেন, রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম রবি, সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জাকির হোসেন বাবু প্রমুখ।