মোহাম্মদ আলী : মিডিয়া জগতে এখন আর কোনো ভাবগাম্ভীর্যতা নেই, নেই কোনো পারিবারিক বা সামাজিক শিক্ষা। মিডিয়া এখন তার দর্শক শ্রোতাদের কোনো বার্তা দেয় না। থাকে না নিজস্ব সংস্কৃতির ধারণ ও লালন। ইতিহাস ঐতিহ্যের কোনো আলামত নেই বেশিরভাগ নির্মাণে। তথ্য প্রযুক্তির অবাঁধ বিচরণের যুগে এখন সবাই অভিনেতা সবাই নির্মাতা। এঁদের বেশিরভারগই নেই প্রাতিষ্ঠানিক বা গুরুমুখী শিক্ষা। তারপরও তারা শুধু ভিউ নির্ভর নির্মাণ করে যাচ্ছেন। আর এই ভিউ নামের ঘুণপোকা প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খেয়ে খোখলা করে দিচ্ছে মিডিয়াকে!
শনিবার, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসা বর্তমান সময়ে ব্যস্ত নির্মাতা রুমান রুনির কাছে মিডিয়ার একাল সেকাল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি উপরের কথাগুলো বলেছেন।
হালের নির্মাতা রুমান রুনি বিনোদন জগতে নিজের নির্মাণ ও সৃষ্টিশীলতায় দেশের দর্শকদের মুগ্ধতা এবং ভালোবাসা অর্জনের মধ্যদিয়ে একদিন পৌঁছে যাবেন অস্কারের দেশে ! এমন স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন জামালপুর জেলার পাথালিয়া গ্রামের কৃতি সন্তান, অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা রুমান রুনি।
ইতোমধ্যে স্বপ্নজগতের বেশ কয়েকটি শাখায় তার সফল পদচারণা ঘটেছে । বিজ্ঞাপন, সর্টফিল্ম, ছোট নাটক, একক নাটক, ধারাবাহিক নাটক ইত্যাদি। ১৫ বছরে তিনি নির্মাণ করেছেন ৪শ ৭০টিরও বেশি একক নাটক এবং ৩টি ধারাবাহিক। তাদের মধ্যে অন্ধজনে অন্ধক্ষণে, সোনায় সোহাগা, বাবা, মনপুতুলের গ্রাম, শিথান পৈথান, বউ বদল, আব্বা, প্রাক্তন, গল্পের প্রেম, জিরো, হাঁটা জামাই, ঘটকের প্রেম, টিবয়, ঠান্ডা গরম, শেষ ভ্রমণ, শুধু হাত ধরেছিলাম, কিপ্টা দুলাভাই ইত্যাদি। ধারাবাহিকের মধ্যে আছে, ফাইভ স্টার মেছ, গোঁফ ও সবুজ গ্রাম পাথরের শহর। অভিনয় করেছেন সুলতানপুর সিনেমাসহ বেশকিছু নাটকেও।
জানা যায়, সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত রুমান এর ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল মিডিয়ায় কাজ করার। সে পথেয় হাঁটছিলেন তিনি। স্বপ্নজয়ে তার কঠোর অধ্যাবসায় একদিন মিলিয়ে দেয় তাকে স্বপ্নপূরণের সিঁড়ি। ২০০৫ দেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের সাথে সহকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগ মিলে তার। তাঁর সাথে তিনি ৫বছর কাজ শিখার সুযোগ পান। এরপর আরেক প্রথিতযশা নির্মাতা তানভির হাসান ও খান মোহাম্মদ বদরুদ্দীন এর সাথে সহকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগ মিলে।
মিডিয়ায় কাজ করার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও দেশের স্বনামধন্য এইসব কিংবদন্তি মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে গুরুমুখী শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে ২০০৯ সালে নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন রুমান রুনি। নির্মাণ করেন প্রথম নাটক ” শিথান পৈথান ” প্রচারিত হয় দেশ টিভিতে। তারপর ২০১১ রবীন্দ্রনাথের গল্প অবলম্বনে নির্মান করেন আধুনিক ভার্সনে ” চিত্রাঙ্গদা “। এরপর আর তাকে পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই নাটক তাকে রাতারাতি জনপ্রিয়তা এনে দেয়। প্রযোজকদের মনে ঠাঁই পায় আস্থা ও নির্ভরতার এক নতুন নাম রুমান রুনি। তারপর একের পর জনপ্রিয়তা পায় তার সব অনবদ্য সৃষ্টিগুলি।
অভিজ্ঞতার এতোটা পথপাড়ি দিয়েও নিজের সৃষ্টি বা নির্মাণ নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর না তুল্লেও বর্তমান মিডিয়া ২০ বছর যাবত টিকে থাকা বা নিজের অবস্থান ধরে রাখাকে সফল মনে করছেন তিনি। বল্লেন, আমি আমার প্রতিটি কাজকে একেকটি শিক্ষা হিসেবে নিই। তাই আমি প্রতিদিনই শিখি। আর আমি আমার সৃষ্টিশীলতা বা কর্মের মাঝে শিক্ষাকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অস্কারের লাল গালিচায় নিয়ে যেতে চাই। এটাই আমার কর্মজীবনের গন্তব্য।
স্বপ্নজয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা নাট্যনির্মাতা রুমান রুনি বর্তমানে বৈশাখী টেলিভিশনে কর্মরত রয়েছেন।
ভিউ নামের ঘুণপোকায় ধরেছে মিডিয়াকে
