ভারতের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে দেশটির বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ। এরপরই তৃতীয় দফায় সরকার গঠন করেছেন নরেন্দ্র মোদি। আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় সর্বশেষ নির্বাচনে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ভালো ফল করলেও দিল্লিতে ভরাডুবির শিকার হয়েছে।
দিল্লির সাতটি আসনের সবগুলোতে জয় পেয়েছে বিজেপি। আর এ নিয়ে দিল্লির ক্ষমতাসীন দল আম আদমি পার্টি (এএপি)-কে দায়ী করেছে কংগ্রেস। যদিও উভয় দলই বিরোধী ইনডিয়া জোটের অংশ।
রোববার (৩০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
অবশ্য ভোটের খারাপ ফলের দায় চাপিয়ে কংগ্রেস কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টিকে অভিযুক্ত করায় জোটে ফাটল ধরল কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি (এএপি) ইনডিয়া জোটের শরিক। কিন্তু, লোকসভা নির্বাচনে কোনো কোনো রাজ্যে দল দুটি একসঙ্গে, আবার কোথাও কোথাও আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। সেই লোকসভা ভোটের ফল পর্যালোচনা করতে গিয়ে এবার এএপির বিরুদ্ধে সরব হলো কংগ্রেস।
দিল্লিতে এএপি ও কংগ্রেস একে অপরের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। কিন্তু দিল্লির সাতটি আসনের একটিও পায়নি এই দুই দল। সাতটি আসনই জিতেছে বিজেপি। এরপরই দিল্লিতে সব আসনে হারের জন্য এবার অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলের দিকে আঙুল তুলল কংগ্রেস।
এএপির আবগারি দুর্নীতি মামলার জেরে কংগ্রেস দিল্লিতে হেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেতা অভিষেক দত্ত।
মূলত আবগারি দুর্নীতি মামলায় দিল্লির একাধিক মন্ত্রী জেলে রয়েছেন। এএপি প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লোকসভা ভোটের আগেই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। সেই মামলায় তিনি এখনও জেলে রয়েছেন।
আবগারি দুর্নীতি মামলা নিয়ে কংগ্রেস নেতা অভিষেক দত্ত বলেন, ‘আবগারি দুর্নীতি নিয়ে আমরা প্রথম সরব হয়েছিলাম। সেইসময় বলেছিলাম, সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে যথাযথ তদন্ত করা দরকার। তখন ইডি ও সিবিআই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরে লোকসভা ভোটের একমাস আগে গ্রেপ্তার করা হয় কেজরিওয়ালকে।’
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় লোকসভা নির্বাচনে আপের সঙ্গে আসন সমঝোতা না করে লড়লে আমাদের আসন বাড়ত। আবগারি দুর্নীতির ফল ভুগতে হয়েছে কংগ্রেসকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সত্যেন্দ্র কুমার জৈন কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার কারণে জেলে রয়েছেন। মণীশ সিসোদিয়া জেলে রয়েছেন এবং তাদের সকলের কারণে কংগ্রেস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে ধর্নায় বসে অতীশি নাটক করছেন এবং তার কারণে এএপি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। মন্ত্রীর কাজ হলো জনসাধারণকে সম্পূর্ণ সুবিধা প্রদান করা। দিল্লিতে পানি নেই এবং তারা ধর্না করছেন।’
অবশ্য এটিই প্রথম নয়। এর আগে দিল্লি কংগ্রেসের সভাপতি দেবেন্দর যাদবও কেজরিওয়ালের দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। বৃষ্টিতে দিল্লিতে জলাবদ্ধতা নিয়ে এএপি সরকারেররর কঠোর সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
এদিকে দিল্লিতে লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফল নিয়ে কংগ্রেসের সমালোচনার জবাব দিতে দেরি করেনি আম আদমি পার্টি (এএপি)। কংগ্রেসকে আক্রমণ করে দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, ‘দেশের সংবিধান রক্ষায় লড়ছে বিরোধী দলগুলো। সেখানে বিরোধীদের নিজেদের মধ্যে বিভাজন ভালো নয়।’
উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের আগে একাধিক বিরোধী দল মিলে ইনডিয়া জোট তৈরি করেছিল। বিজেপি বিরোধিতায় একজোট হয় কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, এএপি, সমাজবাদী পার্টি, সিপিএম-সহ আরও বেশ কয়েকটি দল। কিন্তু ভোটের আগে বিভিন্ন রাজ্যে আসন বণ্টন নিয়ে জোটের শরিকদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়।
এমন অবস্থায় দিল্লিতে আসন সমঝোতা করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি। দিল্লির সাতটি আসনের মধ্যে এএপি লড়েছিল ৪টি আসনে। আর কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছিল তিনটি আসনে। তবে ২০১৪ ও ২০১৯ সালের মতো এবারও এই সাতটি আসনই জিতে নেয় বিজেপি।
অবশ্য এবারের নির্বাচনে পরাজয়ের পর যেভাবে কংগ্রেস নেতারা কেজরিওয়ালের দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, তার প্রভাব জোটে পড়বে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।