আসন্ন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি বেনামে পোস্টারিং নগরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ওইসব পোস্টারে সিটি কর্পোরেশন ও সদ্য সাবেক মেয়রকে হেয় করতে নানা বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক তথ্য দেওয়া হয় দাবি করে অপপ্রচারের অভিযোগ তোলেন সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটুপন্থী নেতাকর্মীরা। ওইসব পোস্টার সাঁটাতে গিয়ে সম্প্রতি গ্রেপ্তারও হন তিন যুবক।
নতুন করে আবারও আপত্তিকর পোস্টার ডিজাইন করার সময় শামীম আশরাফ নামে এক গ্রাফিকস ডিজাইনারকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে নগরীতে দুইটি রাজনৈতিক গ্রুপের বিবাদ ফের প্রকাশ্যে এসেছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা।
গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে নগরের আঠারোবাড়ি বিল্ডিং এলাকায় অবস্থিত শামীম আশরাফের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘গ্রাফিটি’ থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে সোমবার বিকেলে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে শামীমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
গ্রেপ্তারকৃত গ্রাফিকস ডিজাইনার শামীম আশরাফ একজন কবি এবং ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ। তাকে আটকের পর সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু গ্রুপ ও বর্তমান এমপি মোহিত উর রহমান শান্ত গ্রুপের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে কবি শামীম আশরাফকে গ্রেপ্তার করায় সংস্কৃতিকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
জানা গেছে, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিনসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা গ্রাফিটিতে গিয়ে শামীম আশরাফকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ও সাবেক মেয়র ইকরামুল হকের বিরুদ্ধে অপ্রচারমূলক পোস্টার তৈরি না করার অনুরোধ জানান। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভও করেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রাফিটিতে যান ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মেয়রের বড় ভাই মো. আমিনুল হক শামীম। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ শামীম আশরাফকে তুলে নিয়ে যায় থানায়।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন বলেন, কারো বিরুদ্ধে কোননো সমালোচনা থাকলে সেটি যৌক্তিকভাবে এবং প্রকাশ্যে করা যায়। কিন্তু জঙ্গিদের মতো বেনামি পোস্টার সাঁটানো বেআইনি। শামীম আশরাফ সিটি কর্পোরেশন এবং মেয়রের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচারের জন্য বেনামি পোস্টার দিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন। এমন অভিযোগের পর আমরা তার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে হাতেনাতে প্রমাণ পাই। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার করা উচিত নয়।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সিটি কর্পোরেশনের লোগো ব্যবহার করে যদি কেউ অপপ্রচার করে তাহলে আইনের দৃষ্টিতে অবশ্যই তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে লোগো ব্যবহার করে সে অপপ্রচার চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এদিকে শামীম আশরাফকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মো. তাজুল ইসলাম আদালতের কাছে লিখিত আবেদন করেন। সেই আবেদনে উল্লেখ করা হয়- নগরীর ১ নং ওয়ার্ডের মদনবাবু রোডের আমপট্টি মোড়ের গ্রাফিটি ডিজাইনের দোকানে অবস্থান করে শামীম আশরাফ এলাকার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোসহ বিভিন্ন উসকানি ও তথ্য বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ড করে আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটনের চেষ্টায় লিপ্ত আছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ রয়েছে। শামীম আশরাফ আমলযোগ্য অপরাদের সঙ্গে জড়িত আছে কিংবা অপরাধ করেছে মর্মে তাকে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার বিষয়ে পরবর্তী তদন্ত প্রতিবেদন না করা পর্যন্ত শামীম আশরাফকে জেল হাজতে রাখা একান্ত প্রয়োজন। পরে আদালত মঙ্গলবার জামিনের শুনানির দিন ধার্য করে শামীমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন বলেন, শামীম আমলযোগ্য অপরাধে জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহ রয়েছে আমাদের। এটি তদন্ত শেষে বলা যাবে তিনি জড়িত আছে নাকি নেই। মামলা হওয়ার যোগ্য কোনো অপরাধ ঘটালে আমরা ৫৪ ধারায় আটক করতে পারি। এরপর যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে তখন মামলা হতে পারে।
অপরদিকে এ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত। তিনি লিখেছেন- শামীম আশরাফ একজন কবি, সাহিত্যমনা মানুষ। শহর ঘুরে ঘুরে সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরেন। মানুষের উপকার করার চেষ্টা করেন। বিনোদনহীন আমাদের শহরে নিজের অর্থে অনেক সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম করেছেন মানুষের চিত্র-বিনোদনের জন্য। সে ভুল করেছে না শুদ্ধ করেছে বিচার করবে আদালত। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
এছাড়া এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটুর প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ফারমার্জ আল নূর রাজীব।
লিখিত বক্তব্যে এহতেশামুল আলম বলেন, রাতে আমিনুল হক শামীম এবং বেশ কিছু নেতাকর্মী শামীম আশরাফের উপর চড়াও হয়। সেখানে তারা গ্রাফিটির কম্পিউটারে ময়মনসিংহ নগরীর বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে কিছু পোস্টারের ডিজাইন পায়। একপর্যায়ে পোস্টার তৈরির ব্যাপারে আমার নাম বলানোর চেষ্টা করা হয়। বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি মোহিত-উর রহমান শান্তর পক্ষে কাজ করায় আমিনুল হক শামীম ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে আমার বিরুদ্ধে এই অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন।