স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আসন্ন বাজেটে ২৮২টি পণ্যের ন্যূনতম মূল্য প্রত্যাহার বা হ্রাস, সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ও সংরক্ষণমূলক শুল্ক (আরডি) কমানো হচ্ছে। অথচ এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে। এছাড়াও অর্ধশত মূলধনি যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের রেয়াতি সুবিধা (শূন্য শুল্কে আমদানি) প্রত্যাহার করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানকেও মূলধনি যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আনতে এক শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এলডিসি উত্তরণের শর্ত পরিপালন এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধানের সঙ্গে সংগতি রেখে শুল্কহার যৌক্তিকীকরণ করা হচ্ছে আগামী বাজেটে। চলতি বাজেটে ৫০টি পণ্যের ন্যূনতম মূল্য হ্রাস, সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ও সংরক্ষণমূলক শুল্ক (আরডি) কমানো হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী বাজেটে ২৮২টি পণ্যের ন্যূনতম মূল্য প্রত্যাহার-হ্রাস, সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ও সংরক্ষণমূলক শুল্ক (আরডি) কমানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে সামাজিকভাবে অনভিপ্রেত নয় এবং বিলাসী পণ্য নয়-এমন পণ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব পণ্য আমদানিতে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়বে না এবং দেশে উৎপাদন হয় না, সেগুলোকে তালিকায় রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে শিল্পে ব্যবহৃত ৩৩টি আইটেমের কাঁচামাল আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক বসানো হচ্ছে। এ তালিকায় আছে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল; শিরিস কাগজ উৎপাদনে ব্যবহৃত টিউব লিসেনিং জেল, কৃত্রিম কোরান্ডাম, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড; প্যাট চিপস উৎপাদনে ব্যবহৃত ইথাইলিন গ্লাইকল, পানির মোটর উৎপাদনকারী অ্যালুমিনিয়াম ইনগট, মোটর ব্রাশ; বাতি উৎপাদনে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয়, ফ্লোরোসেন্ট বাতির যন্ত্রাংশ, কাচ, প্লাস্টিক; এলইডি টেলিভিশন উৎপাদনে ব্যবহৃত এলইডি বাল্ব, ওপেন সেল এবং ফাইবার উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক বসছে। অন্যদিকে শিল্পের অর্ধশতাধিক যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মূলধনি যন্ত্রাংশ ও নির্মাণসামগ্রী আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে এক শতাংশ শুল্ক বসানো হচ্ছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে ডেভেলপারের আনা ব্যবহৃত সামগ্রীতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক ছাড়া অন্যান্য শুল্ক-কর (ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি শুল্ক) পরিশোধ করতে হবে।
শুধু তাই নয়, কারখানার শেড বা অফিস নির্মাণে প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং স্ট্রাকচার আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। আগে প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং তৈরিতে ব্যবহৃত কম্পোনেন্টের ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য ছিল, এটি আগামী বাজেটে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, রেন্টাল পাওয়ার কোম্পানি কর্তৃক প্লান্ট, ইকুইপমেন্ট ও ইরেকশন ম্যাটেরিয়াল আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। বর্তমানে এসব যন্ত্রে শুল্ক নেই। সূত্র আরও জানায়, মূলত ৬টি বিষয় মাথায় রেখে শুল্ক খাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রথমত, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি। দ্বিতীয়ত, পণ্য খালাসে জটিলতা নিরসন এবং খালাস প্রক্রিয়া সহজীকরণ। এছাড়া দেশীয় শিল্পকে বিদ্যমান নীতি সহায়তা যৌক্তিকীকরণের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নতুন ও সম্ভাবনাময় উৎপাদনমুখী খাতকে বিকাশে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানিমুখী শিল্পকে সহায়তা দেওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের প্রচেষ্টা থাকছে বাজেটে। ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারি পর্যায়ে শুল্ক অব্যাহতি ভোগ করার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসাবে বাজেটে নতুন নতুন পদক্ষেপ রাখা হয়েছে।
শুল্কহার অপরিবর্তিত থাকছে : চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও ৬ স্তরের (০%, ১%, ৫%, ১০%, ১৫%, ২৫%) শুল্কহার বহাল রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ আমদানি শুল্কহার (২৫ শতাংশ) আরোপিত পণ্যের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ সংরক্ষণমূলক শুল্ক ও পণ্যভেদে সম্পূরক শুল্ক বসানোর প্রস্তাব থাকবে বাজেটে। ১২ স্তরবিশিষ্ট সম্পূরক শুল্ক হারও অপরিবর্তিত থাকবে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, প্রধান প্রধান খাদ্যদ্রব্য, সার, বীজ, জীবনরক্ষাকারী ওষুধসহ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার অপরিবর্তিত থাকবে।