মেলান্দহে প্রতিহিংসার জালে চুনোপুঁটি রাঘববোয়ালরা বাইরে

Oplus_131072

মোহাম্মদ আলী : একাধারে ১৭ বছর থাকা আওয়ামী লীগের ক্ষমতা, নাম ও পদবীকে ব্যবহার করে মন্ত্রী, এমপি, জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। বাদ যায়নি জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দও। জামালপুর জেলা ও উপজেলাতেও বেশ কয়েকজন নেতার আঙ্গুল ফোলে কলাগাছ হয়েছে। তবে, কারও পরিবর্তন স্বাভাবিক হলেও কারওটা অস্বাভাবিক মাত্রায়। রাতারাতি বড়লোক হওয়া সেইসব নেতাদের অর্জিত সম্পদের পরিমাণ, উৎস্ব ও বৈধতা নিয়ে আজ প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।
জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক মোঃ জিন্নাহ ওরফে গম জিন্নাহ। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর -৩ আসন ( মেলান্দহ -মাদারগঞ্জ) ৭ বারের এমপি মির্জা আজমের ডানহাত। উপজেলা পর্যায়ে স্বর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তার ইশারায় মেলান্দহে বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খেত। তার অনুমতি ব্যতিরেকে ১১টি ইউনিয়নের কোনো নেতাকর্মী কেউ হাঁচি দিতে পারত না। দলীয় পদ পদবী থেকে, মনোয়ন, টিসিবি ও খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর ডিলার নিয়োগ, কলেজের কমিটি, শালিস দরবার, সরকারি নিয়োগ, সরকারি বরাদ্দ ও বিতরণে তার ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। ৩৪ বছরে তিনি এসব খাতে দল ও দলের এমপির ক্ষমতাকে ব্যবহার করে কামিয়েছেন কয়েকশ কোটি টাকা। গড়েছেন বাড়ি, গাড়ি, জমিজমা ও মার্কেট। যার বৈধতা নিয়ে আজ প্রশ্ন উঠেছে মেলান্দহবাসীর মাঝে?
এলাকাবাসী জানান, মেলান্দহ উপজেলার নাংলা ইউনিয়নের দেউলিয়াবাড়ি গ্রামের মরহুম কাইয়ূম মন্ডলের ২য় ছেলে মোঃ জিন্নাহ। মির্জা আজম এমপি হওয়ার আগে জিন্নাহর আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই করুণ। ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরে ঘুরে তিনি চেয়ারম্যান মেম্বারদের গম কিনতেন। সেটাই ছিল তার পেশা। সেই থেকেই তার নাম হয়েছে গম জিন্নাহ। এই ব্যবসা মাধ্যমেই মির্জা আজমের সাথে তার পরিচয় ঘটে। কারণ মির্জা আজমও এমপি হওয়ার আগে একই ধরণের ব্যবসা করতেন। মির্জা আজমের সম্পৃক্ততায় জিন্নাহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসেন। ১৯৯১ সালে আজম এমপি হওয়ার পর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ ও দলীয় বরাদ্দের সব চাল গম বাধ্যতামূলক তার কাছে বিক্রি করতে হতো। বাজার মূল্যের চাইতে টন প্রতি ৫/৬ হাজার টাকা দামে কম দিতেন তিনি। কোনো প্রকল্প সভাপতি সঠিক মূল্য পাওয়ার আশায় চল/গম অন্যকারও কাছে বিক্রি করতে চাইলে তার কপালে ঝুটত ভৎসনা। কারও কারও প্রকল্প আটকে যেতো। এভাবেই তিনি ২০০৯ সালে মেলান্দহ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক হন। পরে ২০১৫ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। সেই থেকে তিনি মেলান্দহে স্থানীয় ও প্রশাসন পর্যায়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। মুখে মুখে অভিযোগ আছে দলীয় পদ পদবী বিক্রি, ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, জমি ও জলাশয় দখলের।
এভাবেই যার এক সময় একটি মটর সাইকেলে চড়ার ক্ষমতা ছিল না আজ তিনি চার চাকায় চড়েন। উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে তার বড় বড় দুইটি মার্কেট। কয়েকশ একর জমি। আছে ঠিকাদারি ও ছোট বড় আরও কিছু ব্যবসা।
শুধু জিন্নাহ নয়, ক্ষমতার সুফল ছড়িয়েছে তার ভাই ভ্রাতাদের মাঝেও। তার সূত্রধরে বড় ভাই মাওফলও একসময় যুক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। বর্তমানে তিনি নাংলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। এছাড়া ছোট ভাইয়ের ক্ষমতাকে পুঁজি করে ২০১৬ সালে নাংলা ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আজকে তিনিও বাড়ি গাড়ীর মালিক। কিনেছেন এক দেড়শ একর জমি।
আওয়ামী লীগের পতনের পর বড় বড় রাঘববোয়ালরা যখন গাঢাকা দিয়েছে তখন জিন্নাহরা কেমন আছেন? জানতে চাইলে মেলান্দহ উপজেলা বিএনপির একজন সাবেক ছাত্রনেতা আনিছুর রহমান আনিছ বলেন, জিন্নাহদের ক্ষমতা গেলেও তাদের প্রভাব কাটেনি। তারা এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন। তাদের বিরুদ্ধে এখনো কেই মুখ খুলতে সাহস পায় না। অথচ চুনোপুঁটিদের নামে মামলা হচ্ছে, তাদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হচ্ছে। আর জিন্নাহরা ঘুরে বেড়াচ্ছে স্বদর্পে!
এব্যাপারে মোঃ জিন্নাহ, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে শুধু আমার নয়, সারাদেশে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। আমার আজকের পরিবর্তন কোনো অবৈধ উপায়ে নয়। বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে। তারপরও যারা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাদের প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছু নয়।