মেলান্দহ সংবাদদাতা : জামালপুরের মেলান্দহে চলতি বোর মৌসুমে বিআর-২৮ ও ২৯ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর যাবৎ এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষকরা। আক্রান্ত ধান ক্ষেত থেকে কৃষকের ঘরে ১০ কেজি ধানও ঘরে তোলার সম্ভাবনা দেখছেন না। এ ছাড়াও এবার হীরা-১৯ এবং হাইব্রিড ধানেও ব্লাস্ট আক্রান্তের নমুনা দেখা দিয়েছে। সরেজমিন ঘুরে টপসয়েল বিক্রিকৃত ক্ষেতেই এ রোগের আক্রান্তের সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। চলতি বছর বিআর-২৮ জাতের আড়াইশ’ হেক্টর, ২৯ জাতের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর, হাইব্রিড জাতের প্রায় ১১ হাজার হেক্টর এবং অন্যান্য জাতের সর্বমোট ২০ হাজার ১শ’ ৭৫ হেক্টর বোর ধানের আবাদ হয়েছে। অবশ্য, কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, বিগত বছরের তুলনায় এবার এ রোগের আক্রান্ত কম। কৃষি অফিসের পরামর্শ গ্রহণকারিরা অনেকটাই সুফল পেয়েছেন। বিআর-২৮ ও ২৯ জাতের ধানে কাইচ থোড়ের আগে এবং পরে দুই সপ্তাহ পর পর দুইবার প্রতি শতক জমিতে ২লিটার পানি মিশিত নাটিভো/সেলটিমা/ক্লোরোসাইরিন কীটনাশক প্রয়োগের পরার্শ দেয়া হয়েছে। কাইচ থোড়ের ৩/৪ দিন আগে কীটনাশক প্রয়োগে ভালো রেজাল্ট পাওয়া গেছে। অভিযোগ ওঠেছে, সার-কীটনাশক প্রয়োগেও কাজ হচ্ছে না। এ বিষয়ে ভূক্তভোগি ও প্রতারিত কৃষকদের দাবি বাজারে ভেজাল কীটনাশক বিক্রি বন্ধে তদন্ত ও প্রতিকার হওয়া উচিত। দাগি গ্রামের কৃষক মাসুদুর রহমান, রফিকুল ইসলাম এবং নলকুড়ি গ্রামের খলিলুর রহমান জানান-আমাদের প্রায় তিন বিঘা জমিতে বিআর-২৮/২৯ ধানের সমৃদ্ধ গোছা ও শীষ খুবই সুন্দর। কিন্তু ধানে মোহর নাই। কয়েকবার সার-কীটনাশক প্রয়োগ করেও প্রতিকার পাইনি। ধান গাছের খড় গরু খাইলে পাতলা পায়খানা হচ্ছে। কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করেছেন কি না? জানতে চাইলে উত্তরে কৃষক মাসুদুর রহমান ও খলিলুর রহমান বলেন, আমরা খোলাবাজার থেকে কীটনাশক ছিটিয়েছি। কোন কাজ হয়নি। দুই দিনেই ক্ষেত শেষ। কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে কী হবে। উপসহারি কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম জানান-জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পুরনো জাতের ধান এখন সহনশীল নয়। ইতোপূর্বে বিআর-২৮/২৯ জাতের ধানের আবাদ না করতে এবং বোরো ধানের রোগ বালাই প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে মাইকিং করা হয়েছে। কৃষকের সচেতনতার বিকল্প নাই। ময়মনসিংহ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক গবেষণাগারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা-কৃষিবিদ আবুল বাশার জানিয়েছেন, টপসয়েলহীন জমির উর্বরতা হ্রাসের কারণে ব্লাস্ট আক্রমনের ঝুঁকি বেশি থাকে। টপসয়েলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে থাকে ফসফরাস, নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম। টপসয়েলহীন জমির চাহিদা পূরণে কৃষক ইউরিয়া সার বেশি এবং পটাশ ব্যবহার করেন কম। ফলে রাতে ঠান্ডা, দিনে গরম এবং হালকা বৃষ্টির কারণে ফসলে ছত্রাক জাতীয় রোগ দ্রুত ছড়ায়। মেলান্দহ কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল জানান-বায়ুবাহিত ছত্রাক সাধারণত ধানের শীষের গোড়ায় কালচে ক্ষতের সৃষ্টি করে। ফলে মাটি থেকে গাছের গোড়ায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয় এবং ধানের শীষ চিটায় পরিণত হয়। এই রোগাক্রান্ত হলে প্রথমেই বোঝার সুযোগ কিংবা প্রতিকারের সময়ও পাওয়া যায় না। মাঠপর্যায়ে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাসহ আমরাও আগে থেকেই কৃষকদের সচেতন করেছি। যারা আমাদের পরামর্শ মানে নাই, তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। কৃষকদের বিআর-২৮ জাতের পরিবর্তে ৮৮, ৯২ এবং বিআর-২৯ জাতের পরিবর্তে ৮৯ এবং ৯৪ জাতের ধান চাষের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এগুলো যেমন চিকন এবং ফলনেও ভালো।
মেলান্দহে বিআর-২৮/২৯ ধানে ব্লাস্ট রোগ আক্রান্ত
