মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ওপর বাড়তি কর না চাপানোর আহবান-বিএমপিআরবিএ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু বলেন -এই সংকটের মধ্যে এনবিআর সামাজিক দায়বদ্ধতা ভুলে গিয়ে রাষ্ট্রের অর্থ যোগানোর জন্য জনগণের পকেট কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।অথচ দেশে কল ড্রপ, কথা না বোঝা, এবং পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক পরিষেবা না থাকার মতো সমস্যা এখনো রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না করে, নতুন করে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে আমরা মেনে নিতে পারছি না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে মোবাইল সেবার ওপর বাড়তি ভ্যাট বসানো গ্রাহকদের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কিন্তু কর বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারকে স্মরণ রাখতে হবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান যাতে নেমে না যায় ও তাদের ভোগান্তি যাতে না বাড়ে। এই সংকটের মধ্যে যারা খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থা বোঝে না‌ । তারা দেশ পরিচালনায় অবদান রাখবেন কিভাবে?

বুলু আরো বলেন, মূল্য বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যেই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমছে। বিটিআরসি’র হিসাবে গত অক্টোবর ২০২৪ (১২ কোটি ৩৪ লাখ) এর তুলনায় নভেম্বর ২০২৪ (১১ কোটি ৯০ লাখ) এ গ্রাহক কমেছে প্রায় ৪৪ লাখ। তাই নতুন ভাবে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে গ্রাহকরা মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার আরো কমিয়ে দিতে পারেন। ফলে সরকার বাড়তি প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যে ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে, সে লক্ষ্য পূরণ নাও হতে পারে।

ইন্টারনেট পরিষেবায় আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বনিম্নে আছি কিন্তু ভ্যাটের ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে। যেখানে দেশের এখনো ৪৮ শতাংশ জনগণ ইন্টারনেট সেবার বাইরে আছে সেখানে নতুন করে এই উচ্চ কর নাগরিকদের ইন্টারনেট সেবা থেকে বিমুখ করবে।

রাজস্ব আদায় সহজ হওয়ায়  আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে প্রতি বছর এ খাতে নতুন ভাবে শুল্ক আরোপ করতো। গণমানুষের দাবি উপেক্ষা করে তারা ২০২৪—২৫ অর্থবছরের বাজেটে মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে। বর্তমানে সম্পূরক শুল্ক এবং সারচার্জ মিলে মোবাইল ইন্টারনেট ও টকটাইমের ওপর মোট ৩৯ শতাংশ কর আরোপিত আছে। আরও ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলে তা ৪২ শতাংশে উন্নীত হবে। একজন গ্রাহক ১০০ টাকা মোবাইল রিচার্জের বিপরীতে ৩৯ টাকা পরোক্ষ কর দিয়ে কার্যকরীভাবে ৬১ টাকার সেবা গ্রহণ করেন। কর বৃদ্ধির পর, গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জের বিপরীতে ৫৮ টাকার সেবা পাবেন। শুল্কের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ অথচ মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ও সেবার দিক দিয়ে অবস্থান সর্বনিম্নে। সরকারের শুল্ক বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে অপারেটরগুলো সেবার মান না বাড়িয়ে মোবাইল ইন্টারনেট ও টকটাইম প্যাকেজের মূল্য নিজেদের ইচ্ছে মতো বৃদ্ধি করে।  শুল্ক বৃদ্ধির সম্পূর্ণ দায় বহন করতে হয় গ্রাহকদেরই।