যতদিন শাপলা নয় ততদিন আন্দোলন, বড় কর্মসূচিতে যাচ্ছে এনসিপি

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) “শাপলা” প্রতীক না পেলে আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিকারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংবেদনশীল বিবাদ বাড়লেও দলটির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, তারা রাজনৈতিক মাঠে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং শাপলাকেই তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতীক হিসেবে ধরে রাখবে। যতদিন পর্যন্ত শাপলা প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়া হবে না, ততদিন প্রতিবাদ ও কর্মসূচি জারি থাকবে; এভাবেই দলটি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।

এনসিপির নেতারা বলছেন, শাপলা প্রতীকের বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্তকে কেবল প্রতীক বিতরণ হিসেবে দেখেন না; তারা এটাকে রাজনৈতিক অধিকার ও অংশগ্রহণের বিমূর্ত প্রশ্ন হিসেবে বিবেচনা করছেন। এ কারণে তারা আইনি পথে না গিয়ে রাজনৈতিকভাবে বিষয়টির মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইসির কাছ থেকে শাপলা না দেয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, তবে দলের অবস্থান চূড়ান্ত; শাপলা ছাড়া বিকল্প তারা গ্রহণ করবে না।

১৯ অক্টোবর ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে এনসিপি প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। এ বৈঠকে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ঘণ্টাব্যাপি বৈঠকে প্রধানত শাপলা প্রতীকই আলোচনা হয়। ইসি বিকল্প প্রতীক দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও এনসিপি শাপলা নিয়েই অনড় ছিল।

এনসিপি জানায়, আগেও তারা তিনটি প্রতীক (শাপলা, কলম, মোবাইল ফোন) প্রস্তাব করেছিল; পরে সাদা বা লাল শাপলা চাওয়ার লিখিত আবেদন পাঠানো হয়। ২২ জুন দলটির নিবন্ধনের আবেদন দাখিল করা হয়। ইসি প্রথমে বলেছিল অনুমোদিত প্রতীকের তালিকা থেকে একটি প্রতীক বেছে নিতে হবে; পরে সময়সীমা পরিবর্তন করে ১৯ অক্টোবর প্রতীক নির্ধারণের নির্দেশ দেয়। এনসিপি কমিশনের সিদ্ধান্তের আইনগত স্বচ্ছতা জানতে চেয়েছে এবং দাবি করেছে, ইসির প্রত্যাখ্যানের কোনও আইনগত ভিত্তি তাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়নি।

এনসিপি নেতারা উল্লেখ করেছেন, পূর্বে দেখা গেছে অন্যান্য দলকে পৃথক প্রতীক দেওয়া হয়েছে যেমন বিএনপিকে ‘ধানের শীষ’ ও জাসদ-কে ‘তারা’ এতদ্বারা তারা যুক্তি দেন যে শাপলাকেও তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে। দলটি বলছে, যদি ইসি তাদের ইচ্ছেমতো অন্য প্রতীক চাপিয়ে দেয়, তা সাংগঠনিকভাবে দলকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা হবে এবং তা সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাব্যতার প্রশ্ন তুলবে।

দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, শাপলা না দিলে ইসিকে রাজনৈতিকভাবে বাধ্য করা হবে। তারা আইনি লড়াই না করে জনগণের সামনে ও গণমাধ্যমে বিষয় তুলে ধরবেন। আগামী সপ্তাহে ঢাকায় বড় কর্মসূচি এবং তার পূর্বেই বিভাগীয় ও অন্যান্য সমন্বয় সভা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে তারা জনগণকে তাদের প্রতীক ও দাবির প্রতি সচেতন করবেন এবং প্রতীক বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন।

ইসি পূর্বে ৯ জুলাই জানিয়েছিল নির্বাচন পরিচালনা বিধি অনুযায়ী শাপলা প্রতীক তালিকায় রাখা হবে না। পরবর্তীতে ২৩ সেপ্টেম্বর নির্বাচনী প্রতীকের সংখ্যা ৬৯ থেকে বাড়িয়ে ১১৫ করা হলেও শাপলা বাদ রাখা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর এনসিপি লিখিতভাবে জানায়, কমিশনের যুক্তি আইনগতভাবে যথাযথ নয় এবং তাদের প্রত্যাখ্যানের কোনো প্রাসঙ্গিক আইনি ভিত্তি উপস্থাপন করা হয়নি।

উল্লেখ্য, এনসিপি দাবি করছে, প্রতীক নির্বাচন ও বিজ্ঞাপন প্রকাশের ক্ষেত্রে পত্রিকায় প্রতীক উল্লেখ অনিবার্য; তাই কাউকে জোর করে অন্য প্রতীক চাপানো আইনি ও নীতিমালা উলঙ্ঘন। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে দলটি শাপলা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সমন্বিত আন্দোলনের পরিকল্পনা কার্যকর করবে।