দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেন, যেকোনো সময় স্থিতিশীলতা ভেঙে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দলটির সাংস্কৃতিক পার্টির আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে লক্ষ করছি সারা দেশের মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। একটি ভাগকে বলা হচ্ছে দেশপ্রেমিক, আরেকটি ভাগকে বলা হচ্ছে দেশদ্রোহী। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে তারা দেশ প্রেমিক। এদের সংখ্যা কম নয়, অর্ধেকের কাছাকাছি হতে পারে। বাকি যারা নির্যাতিত হননি, তারা দেশ প্রেমিক নন, আর যারা পুরস্কৃত হয়েছেন তারা দেশদ্রোহী।
তিনি বলেন, দেশ প্রেমিকদের ফ্রি হ্যান্ড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে– যেকোনো ধরনের মিথ্যা মামলা, ব্যক্তিগতভাবে তাদের গালাগালি করা, বাড়িঘরে আক্রমণ ও লুটতরাজ করা, তাদের (যারা নির্যাতিত হননি) সহায়-সম্পত্তি দখল করা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করা, মিল ফ্যাক্টরিতে আগুন দেওয়া, পার্টি অফিসে আগুন দেওয়া, তাদের কোনোরকম কাজ করতে না দেওয়া।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, তাদের অনেকে সৎ, দেশের জন্য কাজ করছেন। কিন্তু একটি অদৃশ্য শক্তি তাদের কাজের মধ্যে থাকছে। মনে হচ্ছে তারা একরকম কাজ করছেন, হচ্ছে আরেক রকম।
জিএম কাদের বলেন, পুলিশ, প্রশাসন এবং জুডিশিয়ারি তারা যেসব কাজ করছে, তা মনে হচ্ছে বাধ্য হয়ে করছে। কাজেই দেশকে শুধু দু’ভাগে ভাগ করা হয়নি, এক ভাগকে আরেক ভাগের ওপর লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংঘাত পূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি করা হয়েছে। সংঘাতময় আবহাওয়ায় অর্ধেক লোক এক পাশে আরেক ভাগ অপর পাশে। এই বিভাজন আপনি যদি ধরে রাখতে চান আপনি ধরে রাখেন। এটা দুই-চার দিন-দশ দিন এক বছর। এটাতে দেশে কখনোই স্থিতিময় পরিবেশ আসবে না। যেকোনো সময় স্থিতিশীলতা ভেঙে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, প্রতিহিংসা আমাদের শেষ করতে হবে, অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে শেষ করবেন আর বাকি অর্ধেক নিয়ে দেশ চালাবেন এটা কি সম্ভব হবে? যারা এই দিবা স্বপ্ন দেখছেন তাদের আমি বলব সামনের দিকে তাকিয়ে দেখুন কোথায় কি হয়। আমাদের রাজনীতি করতে দিতে হবে, সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে দিন, সমস্ত বিষয়াবলী প্রেসে আসতে দিন।
আগামী নির্বাচনে লেভেল ফিল্ড তৈরি হবে বলে মনে হচ্ছে না দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে গেছি, কাল বক্তব্য শুনে মনে হলো আপনারা সংস্কার করতে পারছেন না। সংস্কার করতে গেলে এটা পার্লামেন্টে করতে হবে এবং পার্লামেন্টে সব দলের সহযোগিতা ছাড়া এটাকে পাস করানো সম্ভব হবে না।
ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে জীবন চালানো জন্য অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না দাবি করে জিএম কাদের বলেন, ২৪’ এর আন্দোলনের পর ছাত্র-জনতা কি চেয়েছিল? শেখ হাসিনার পতন এবং একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন। তার মাধ্যমে সরকার গঠন ও একটি শাসন ব্যবস্থা। যেখানে এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে যাতে দানব তৈরি করা না হয়, সেরকম একটি শাসন ব্যবস্থা। এটাই ছিল তাদের চাওয়া।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন, আমরা যুদ্ধ করেছি এটা মুসলমান দেশ, ইসলাম কায়েম করব। আমি বলতে চাই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই মুসলমান। সেখানে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আছে। আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশি তারা কিন্তু ধর্মের ব্যাপারে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। ধর্মকর্ম পালনে তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল, আন্তরিক কিন্তু একেবারে ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে জীবন চালানো, ইসলামী রুট হিসেবে চালানোর জন্য অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দাবি করছি, নির্বাচন চাই। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না। দেশে যে হিংসার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, সেই পরিবেশ সামনের দিকে দেশকে একটা বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে।