ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল রাফাহ শহরে হামলার পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছে ইসরায়েল। এমনকি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে রাফাহতে হামলার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। তবে এখানে হামলার ব্যাপারে বরাবরই আপত্তি তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আর এবার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা হবে ‘বড় ভুল’। এমনকি রাফাহ শহরে আশ্রয় নেওয়া লোকেদের যাওয়ার জন্য কোথাও জায়গা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমস্ত ধরনের সতর্কতা সত্ত্বেও রাফাহতে ইসরায়েলের যে কোনো হামলা হবে ‘বড় ভুল’, এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। হ্যারিস এবিসি নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা একাধিক কথোপকথনে এবং প্রতিটি উপায়ে পরিষ্কার হয়েছি যে, রাফাহতে যে কোনও বড় সামরিক অভিযান বড় ভুল কাজ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে এটা বলতে দিন: আমি মানচিত্রগুলো অধ্যয়ন করেছি। (রাফাহতে আশ্রয় নেওয়া) সেই লোকেদের যাওয়ার জন্য কোথাও কোনও জায়গা নেই।’
রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে হ্যারিস বলেন, তারা ‘ধাপে ধাপে এটি গ্রহণ করবে’। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, সবকিছুই বিবেচনার মধ্যে থাকবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শান্তিতে বাধা দিচ্ছেন কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে হ্যারিস বলেন: ‘আমরা গাজার বিষয়ে আমাদের যেসব অগ্রাধিকার রয়েছে, সেগুলো এগিয়ে নেওয়ার কাজ চালিয়ে যাব।’
কমলা হ্যারিস নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিরোধিতা করেন এবং ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি উভয়েরই ‘সমান নিরাপত্তা ও মর্যাদার’ সঙ্গে বসবাসের অধিকার নিশ্চিত করতে আহ্বান জানান।
এর আগে রাফাহতে হামলা ‘ভুল’ পদক্ষেপ হবে বলে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এমনকি নেতানিয়াহু ইসরায়েলের ক্ষতি করছেন বলেও চলতি মাসেই মন্তব্য করেন জো বাইডেন।
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত সপ্তাহে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘(নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে) প্রেসিডেন্ট বাইডেন ব্যাখ্যা করেছেন কেন তিনি রাফাহতে ইসরায়েলের বড় পরিসরের সামরিক অভিযান পরিচালনার সম্ভাবনা নিয়ে এতো গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
সুলিভান সেসময় বলেন, ‘সেখানে বড় আকারের স্থল অভিযান পরিচালনা করা হলে তা হবে একটি ভুল, এটি আরও নিরীহ বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ঘটাবে। ইতোমধ্যেই বিরাজমান ভয়াবহ মানবিক সংকটকে আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে, গাজায় নৈরাজ্যকে আরও গভীরে নিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলকে আরও বিচ্ছিন্ন করবে।’
এর আগে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল রাফাহতে হামলার অনুমোদন দেয় দখলদার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গত ১৫ মার্চ যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এরপরই রাফাহতে হামলার অনুমতি দেওয়ার বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র। সেসময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানান, তারা রাফাহতে হামলা চালানোর কোনো সুস্পষ্ট এবং কার্যকর পরিকল্পনা দেখেননি। ইসরায়েল যদি রাফাহতে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান চালাতে চায় তাহলে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দেখাতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৪ হাজারের বেশি মানুষ।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ কোনও ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।