রাষ্ট্রের নতুন যাত্রার প্রথম লক্ষণ হবে ন্যায়বিচার : জোনায়েদ সাকি

বারবার শহীদের কথা বলি কারণ, পুরানো বন্দোবস্ত জায়গা করে নেওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ন্যায়বিচার হবে আমাদের এই রাষ্ট্রের নতুন যাত্রার প্রথম লক্ষণ।

সোমবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুর-১০ আইডিয়াল গার্লস স্কুলের পাশে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। শহীদ জুলফিকার আহমেদ শাকিলসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সব শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বলন, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও স্মৃতিচারণেরও আয়োজন করা হয় সেখানে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, কথা ছিল, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। কিন্তু শহীদ পরিবারগুলো হাহাকার করে—বিচার প্রক্রিয়া কত দূর—ভেবে। একটা রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে জনগণের রাষ্ট্র হয়ে উঠছে কিনা, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারছে কিনা, তা নির্ভর করে রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার দেওয়ার সক্ষমতার ওপর। আমাদের শহীদ এবং যারা আহত, তারা এই জাতিকে গৌরবান্বিত করেছেন। তারা প্রমাণ করেছেন, আমাদের দেশের মানুষ মৃত নয়, তারা অন্যায়ের বিরোধিতা করে ও শেষপর্যন্ত লড়াই করে খুনিদের ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করে আমাদের গৌরবান্বিত করে গেছেন।

তিনি বলেন, যখন মিরপুর-১০ দখল হয়ে গিয়েছিল, তখন অন্য সহযোদ্ধাদের নিয়ে শহীদ শাকিলরা জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই প্রতিরোধ সমরে খালি হাতে লড়াই সংগঠিত করেছিলেন তারা। আওয়ামী পুলিশ ও গুণ্ডাবাহিনী সশস্ত্র একসঙ্গে জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেখানে। ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে তিন দিন কোমায় থাকার পর শহীদ শাকিল শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবান্বিত কাজটি শহীদ জুলফিকার শাকিল করে গিয়েছেন। ছাত্র ফেডারেশন যত দিন টিকে থাকবে, তত দিন এই সংগঠনকে শহীদ শাকিল যুগে যুগে গৌরবান্বিত করে যাবেন। শহীদ শাকিলের চৈতন্য, সততা, দেশপ্রেম ও এই দেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামকে ধারণ করার অঙ্গীকারকে ধারণ করা ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিটি নেতা, কর্মী, সদস্যের দায়িত্ব। আমরা গণসংহতি আন্দোলন যেভাবে জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছি, তাতে দিশা দেখাবেন শহীদ জুলফিকার আহমেদ শাকিল।

তিনি বলেন, চব্বিশের কোনো শহীদের মামলা ও তার বিচারকে রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে ফেলতে আমরা দেবো না। আমরা প্রতিটি হত্যার বিচার ও ন্যায়বিচার চাই। এই ন্যায়বিচার হবে আমাদের এই রাষ্ট্রের নতুন যাত্রার প্রথম লক্ষণ। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল ও কর্মকর্তা বাড়িয়ে বিচার প্রক্রিয়াকে দ্রুত এগোনোর আহ্বান জানান।

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে জোনায়েদ সাকি বলেন, সবার আগে কর্তব্য ছিল শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের পর সবচেয়ে বড় মাহেন্দ্রক্ষণ ৫ আগস্ট আবার আসছে। আমরা এখনও জানি না শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাবো কি না, তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত দেখব কি না, তাদের পরিবারের জীবনের দায়িত্ব নেওয়া নিশ্চিত হবে কি না, সমস্ত আহতের চিকিৎসা ও জীবনের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে সেটা দেখব কি না। এটা এই সরকারের ব্যর্থতা।

গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, শহীদ জুলফিকার শাকিল নিজেকে বহু আগে থেকেই এই লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। লড়াই চলাকালে শহীদ শাকিলের লেখা কবিতা পড়লে মনে হয়, তিনি তার আত্মাহুতিকে নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছিলেন। যে কারণে শাকিলরা এভাবে জীবন দিয়ে গেলেন, সেই বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা শপথ করেছি। শহীদ শাকিলরা জীবন দিয়ে জীবনকে অতিক্রম করেছেন। সমস্ত শহীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে হবে। আহত ও শহীদ পরিবারের জীবনের দায়িত্ব নিতে হবে।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, বহু মানুষ যে সময় ফ্যাসিবাদের দৌরাত্ম্যে হতাশ হয়ে পড়েছিল, তখন শহীদ জুলফিকার আহমেদ শাকিল পরিবর্তনের রাজনীতিতে যুক্ত হন। যে নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি জীবন দিয়েছেন, তার হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

শহীদ শাকিলের স্কুল ‘আমাদের পাঠশালার’ প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, জুলফিকার আহমেদ শাকিলের মতো যোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বলেই আমরা গণঅভ্যুত্থানে মানুষের বিজয় দেখেছি।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা মহানগরের নেতা ইয়াসিন খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক কুমার রায়, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলীফ দেওয়ান ও সৈকত মল্লিক, মিরপুর পল্লবী থানার সদস্য সচিব প্রদীপ রায়, ঢাকা মহানগর উত্তরের সংগঠক সাইফুল্লাহ সিদ্দিক রুমন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য হাসান আশরাফ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির প্রধান তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহিম চৌধুরী; বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় স্কুলবিষয়ক সম্পাদক হাসান আল মেহেদী, সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব ইরান ও আশরাফুল আলম সোহেল, ঢাকা মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাঁকন বিশ্বাস; বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুঁইয়া, মিরপুরের সংগঠক রতন তালুকদার, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আবু রায়হান খান প্রমুখ।