চলতি মৌসুমের মাঝপথেই চাকরি যাই-যাই করছিল রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি কোচ কার্লো আনচেলত্তির। লা লিগা ও উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লস ব্লাঙ্কোসদের শোচনীয় দশার দরুন সেই শঙ্কা জেগেছিল। কিছুটা হলেও সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠেছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দলটি। এরই মাঝে প্রথমবার আয়োজিত ফিফা ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে শিরোপা জিতেছে রিয়াল। তাদের ইতালিয়ান কোচ আনচেলত্তির পালকেও নতুন মুকুট যুক্ত হয়েছে।
গতকাল (বুধবার) ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালের ভেন্যু লুসাইল স্টেডিয়ামে আন্তঃমহাদেশীয় এই টুর্নামেন্টে মেক্সিকোর কনক্যাকাপজয়ী ক্লাব পাচুকা এফসির মুখোমুখি হয় রিয়াল। তার আগেরদিন কাতারের দোহায় তুলে দেওয়া হয় ‘ফিফা দ্য বেস্ট’ পুরস্কার। যেখানে রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়র প্রথমবার ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন। আর বর্ষসেরা কোচের ট্রফি উঠেছে আনচেলত্তির হাতে।
একদিন পরই তার দল রিয়াল জিতল ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের শিরোপা। গত মৌসুমে এটি তাদের পঞ্চম শিরোপা। এর আগে জিতেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগা, উয়েফা সুপার কাপ ও স্প্যানিশ সুপার কাপ। কিলিয়ান এমবাপে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও রদ্রিগো গোয়েসের গোলে নামেভারে বেশ পিছিয়ে থাকা পাচুকাকে ৩-২ ব্যবধানে হারায় রিয়াল। ফিফার ক্লাব বিশ্বকাপের পরিধি ও ফরম্যাট দুটিই বদলে যাচ্ছে ২০২৪-২৫ আসর দিয়ে। সে কারণেই ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ক্লাব বিশ্বকাপের আদলে প্রথমবার আন্তঃমহাদেশীয় কাপ আয়োজন করেছে।
রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্ব নেওয়ার পর ১২২ বছরের ইতিহাসে সবমিলিয়ে সর্বোচ্চ১৫টি শিরোপা জিতেছেন কার্লো আনচেলত্তি। দুই মেয়াদে এই ইতালিয়ান মাস্টারমাইন্ডের ঝুলিতে জমা হয়েছে ৩টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ২টি লা লিগা, ২টি কোপা দেল রে, ২টি স্প্যানিশ সুপারকাপ, ৩টি উয়েফা সুপার কাপ, ২টি ক্লাব বিশ্বকাপ ও সর্বশেষ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ট্রফি। এতদিন তার সঙ্গে সর্বোচ্চ ১৪ শিরোপা জয়ের যৌথ রেকর্ড ছিল মিগুয়েল মুনোজের।
ছয় কনফেডারেশনের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে আয়োজিত এই নকআউট টুর্নামেন্টের ফাইনালে রিয়াল মুখোমুখি হয় কনক্যাকাপ চ্যাম্পিয়ন পাচুকার। যেখানে জিতে আনচেলত্তির অর্জনের পাল্লা আরও ভারি হলো, যা রিয়ালের ১২২ বছরের ইতিহাসে আর কোনো কোচের দখলে নেই। সবমিলিয়ে ক্লাবটির দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৫টি শিরোপা জিতেছেন এই ইতালিয়ান মাস্টারমাইন্ড। শুধুমাত্র রিয়ালেই আনচেলত্তির ঝুলিতে জমা করেছে ৩টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ২টি লা লিগা, ২টি কোপা দেল রে, ২টি স্প্যানিশ সুপারকাপ, ৩টি উয়েফা সুপার কাপ, ২টি ক্লাব বিশ্বকাপ ও সর্বশেষ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ট্রফি।
ইউরোপিয় ক্লাব ফুটবলে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন আনচেলত্তি। এর আগে রিয়াল মাদ্রিদের কোচিং করানো মিগুয়েল মুনোজ সর্বোচ্চ ট্রফি জয়ের রেকর্ড ছিল। ১৯৫৯ এবং ১৯৬০-৭৪ মেয়াদকালে মোট ১৪টি শিরোপা জিতেছিলেন এই স্প্যানিশ কিংবদন্তি কোচ। এর মধ্যে ৯টি লা লিগা ও ২টি ইউরোপিয় শিরোপা ছিল মুনোজের। তবে এতদিন তার সঙ্গে রেকর্ডটি ভাগাভাগি করা আনচেলত্তি ১৫তম শিরোপা জিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন।
ইতালিয়ান এই কোচের মাধ্যমে কেবল রিয়ালই উপকৃত হয়নি, বছরের পর বছর তার ট্যাকটিক্স ও মেন-ম্যানেজমেন্ট দক্ষতায় বিমোহিত হয়েছে ফুটবল বিশ্ব। আনচেলত্তির রিয়ালের হয়ে যেমন তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন, তেমনি এর আগে ইউরোপের সর্বোচ্চ এই প্রতিযোগিতায় দু’বার জেতান এসি মিলানকে। দুই ক্লাব মিলিয়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে আনচেলত্তিকে সবচেয়ে সফল ম্যানেজারে পরিণত করেছে।