শাহিনারা উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল রাজনীতিতে

Oplus_131072

মোহাম্মদ আলী ; আমাদের দেশে শীত ও বসন্ত কালে মৌসুমের সুফল ভোগ করতে যেমন কিছু নতুন অতিথি পাখির আগমন ঘটে। বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তেমনি আগমন ঘটেছিল শাহিনা বেগমের। এর আগে শাহিনা নামে কোনো নারী নেত্রীকে চিনতেন না বকশিগঞ্জের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ! যদিও তার বড় উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন ।
জানা যায়, সময়টা ২০১৭/১৮ সাল। জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার প্রথম পৌর নির্বাচনী আমেজ বইছিল। ঠিক তখনি কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য পরিচয়ে মেয়র পদে দোয়া প্রার্থী হিসেবে একজন নারী প্রার্থীর আত্মপ্রকাশ ঘটে। নাম তার শাহিনা বেগম। নির্বাচনী মৌসুমে হঠাৎ এমন এক অতিথি পাখির আগমনে চমকে উঠে পৌরবাসীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্ভাবনাময় প্রার্থী এবং সাধারণ নেতাকর্মীরা। কারণ তিনি ক্ষমতাসিন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চেয়েছেন। তাকে ঘিরে অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যেও কানাঘুষা শুরু হয়।
এদিকে মনোনয়নের সময় যত ঘনিয়ে আসে তাকে ঘিরে আলোচনা সমালোচনা তত প্রখর হতে থাকে। এরইমধ্যে তিনি বকশিগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদটি বাগিয়ে নেন।
অপরদিকে শাহিনার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাব্য ঘিরে প্রকাশ্য বিরোধিতায় নামে দলের সাবেক ও বর্তমান নেতারা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, নুরুজ্জাজামান, শাহিনা স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সদস্য বলে পত্রিকায় বিবৃতি দেন। বসে থাকে না আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, মোঃ সাইফুল ইসলাম বিজয়। তিনি শাহিনার স্বাধীনতা বিরোধী পারিবারিক ইতিহাস তুলে ধরেন সংবাদ সম্মেলনে। কিন্তু, তাতেও থেমে থাকেনি তার মনোনয়ন দৌড়। এতো প্রতিবাদ প্রতিরোধের মুখেও ঠেকানো যায়নি শাহিনার মনোনয়ন। সবকিছু যেন আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। সেই ভাবেই বকশিগঞ্জ পৌরসভা মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পান শাহিনা।
কিন্তু, শাহিনা সে মনোনয়ন যুদ্ধে জিতে গেলেও হেরে যান ভোট যুদ্ধে। বকশিগঞ্জের সাধারণ ভোটারা তাকে মারাত্বক ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। ফলাফলে তার স্থান হয় থার্ডক্লাসে। অর্থ বিত্ত, ক্ষমতা ও প্রভাবের মুখে ছাঁই দিয়ে জনগণ ঠিকি বেঁছে নেন তাদের মনের মতো প্রার্থীকে।
তারপরও ক্ষান্ত হননি ক্ষমতালোভী এই নারী। পরবর্তীতে স্থানীয় এমপির মদদ আর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের আশির্বাদে তিনি হাসিল করে নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ।
এরপর তার লালসা আরো বাড়তে থাকে। ২০২৪ সালে আওয়ামী সরকারের পতনের আগে দেশব্যাপী যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সে নির্বাচনেও তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে অংশ নেন। এ নির্বাচনেও তার জনবিচ্ছিন্নতার চরম জবাব মিলে। ফলাফল অনুযায়ী তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
অবশেষে ৫ অগাস্ট ছাত্রজনতা-আন্দোলনের মুখে সরকার পতন হলে এলাকা ছাড়েন শাহিনা।
বর্তমানে তিনি নাশকতা মামলার পলাতক আসাসি। তাকে খুঁজছে পুলিশ। গ্রেফতার এড়াতে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এখানে সেখানে।