শিক্ষায় বৈষম্য দূর এবং সর্বস্তরে ইসলামি শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ দাবি করেন বক্তারা।
ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশের উদ্যোগে ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব ভাইস প্রিন্সিপাল মো. আবদুর রহমানের সঞ্চালনায় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ সামছুল আলম। বিশেষ অতিথি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন দফতরের পরিচালক মো. শাহাব উদ্দিন আহমেদ, দুধমুখা দরবার শরীফের পীর সাহেব মাওলানা লোকমান হোসাইন এবং প্রধান আলোচক ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোঃ শহীদুল হক।
আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মোকামিয়া দরবার শরীফের পীর সাহেব প্রিন্সিপাল (অব.) মাওলানা শাহ মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস আল মাদানী, প্রিন্সিপাল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, প্রিন্সিপাল মুফতি বদিউল আলম সরকার, প্রিন্সিপাল মাওলানা মো. আবু হানিফ, প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ ইজাহারুল হক, মুফতী মাওলানা ওসমান গণি সালেহী, ড. মোহাম্মদ হানিফ খান, ড. মোরশেদ আলম সালেহী, মো. জহিরুল ইসলাম, মাওলানা মোসলেহ উদ্দিন, ইবতেদায়ী স্তরের সংগঠনের দায়িত্বশীল।
প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ সামছুল আলম বলেন, শিক্ষায় বৈষম্য দূর করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব, তিনি সর্বস্তরে ইসলামি শিক্ষা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় বক্তারা সরকারের প্রতি কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে- অনতিবিলম্বে শিক্ষায় বৈষম্য দূর করতে হবে- যেমন : ১। বেসরকারী মাদরাসা, কলেজ, হাইস্কুল জাতীয়করণ করতে হবে, ২। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা বিগত ১৬ বছর থেকে মঞ্জুরীর বদ্ধ দ্বার খুলতে হবে, ৩। মঞ্জুরীপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসাসমূহকে জাতীয়করণের আওতাভুক্ত করতে হবে। ৪। অনতিবিলম্বে স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। ৫। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের সরকারী শিক্ষক কর্মচারীদের সমপরিমাণ উৎসবভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দিতে হবে। ৬। মাদরাসার স্বকীয়তা ও যোগ্য আলেম তৈরীর লক্ষ্যে মাদরাসার জন্য আলাদা পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবিএম) গঠন করতে হবে, ৭। মাদরাসার অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের জন্য শিক্ষক-কর্মচারী বরাদ্ধ ও এমপিওভুক্ত করতে হবে, ৮। মাদরাসা পাঠদানরত ২ শতাধিক এমফিল পিএইচডি ডিগ্রীধারীগণকে অভিজ্ঞতা শিথিল করে প্রশাসনিক পদে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠিত দফতরে পদায়ন করতে হবে, ৯। মাদরাসা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, দেশের ৩টি সরকারী আলিয়া মাদরাসার সকল পদে মাদরাসা ও ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিতদের পদায়ন ও নিয়োগ দিতে হবে, ১০। এনটিআরসি-এর নিবন্ধন পরীক্ষা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি শিক্ষায় অনার্স উত্তীর্ণদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে, ১১। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সকল কলেজে ইসলামিয়াত ও অনার্স কোর্স খোলার অনুমতি দিতে হবে, ১২। ইসলাম শিক্ষাকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মানবিক, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা,গার্হস্থ্য, অর্থনীতি, কারিগরিসহ সকল শাখায় আবশ্যিক বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, তথ্য-প্রযুক্তি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও সরকারী উচ্চতর প্রশিক্ষণে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের প্রতিটি বিভাগে ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ১৩। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে যোগ্য আলেমগণকে সম্পৃক্ত করে ইমান আকিদাভিত্তিক ও বিজ্ঞান প্রযুক্তির সমন্বয়ে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন ও পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে হবে। ১৪। দেশের অবহেলিত ও বঞ্চিত ৩টি সরকারি আলিয়া মাদরাসাকে উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং দেশের প্রতি জেলা-উপজেলায় একটি করে মাদরাসা সরকারীকরণ করতে হবে।