শেরপুরে গারো পাহাড়ে মিলছে সাম্মাম ফল

শেরপুর সংবাদদাতা : শেরপুরের গারো পাহাড় অঞ্চলে গতবছর থেকে চাষ শুরু হয়েছে। রকমেলন মরু অঞ্চলের ফল। শেরপুর গারো পাহাড়ে এ ফল চাষে বাজিমাত করেছেন উদ্বোক্তা আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, গত বছর চাষ করে লাভবানও হয় এই কৃষি উদ্যোক্তা। এবারও চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। নতুন জাতের এই মরু ফলের চাষ হওয়ায় ফলের বাগান দেখতে আসছেন আশপাশের এলাকার আগ্রহী কৃষকরা। তার কাছ থেকে চাষের পরামর্শ নিচ্ছেন অনেক কৃষক। এ জাতের রকমেলন ফলের বাইরের অংশ সবুজ এবং ভেতরে হলুদ। অন্য জাত বাইরের অংশ হলুদ ও ভেতরে লাল। ২ জাতের ফলই খেতে মিষ্টি। সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত। দশ শতাংশ জায়গায় ইস্পাহানির রকি জাতের রকমেলন মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করেছেন আনোয়ার হেসেন। ৩ মাসের ব্যবধানে অল্প জায়গায় খরচ হয় ২৮ হাজার টাকা। শুরুতেই বিক্রি করেছেন প্রায় লাখ টাকা। বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সুতোয় তৈরী মাচায় ফুলে-ফলে ভরে গেছে রকমেলন বা সাম্মাম ফল। নানা আকারের পাকা-আধাপাকা কয়েকশ ফল ঝুলছে। সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করছে ফল। গাছের গোড়ার অংশের মাটি মালচিং পেপার দিয়ে ঢাকা। সহকর্মীসহ উদ্বোক্তা আনোয়ার হোসেন গাছ থেকে ফল উঠিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সাধারণ গ্রাহকদের নিকট বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন। আর কেনার অপেক্ষা করছেন গ্রাহক পাইকাররা। ওই তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি ছেড়ে ক’বছর আগে বাড়ি এসে বাবার সঙ্গে সবজি চাষ শুরু করি। সবজির পাশাপাশি নতুন কিছু চাষ করার চেষ্টায় ইউটিউব ঘেঁটে রকমেলন (সাম্মাম) সম্পর্কে ধারণা পাই। উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় শুরু করি পরীক্ষামূলক চাষ। প্রথমবারেই সফল হয়েছি। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ শতক জমিতে বীজ রোপণ করি। মাত্র ১ মাসেই গাছে ফুল আসতে শুরু করে। এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে ফল পাকতে শুরু করে। মাত্র ৩ মাসেই বাজারে বিক্রির উপযোগী হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভাল। ফল চাষে খরচ হয়েছে ২৮ হাজার টাকা। ইতোমধ্যেই প্রায় লাখ টাকার বিক্রি করেছি। বাগানে যে পরিমাণ ফল এসেছে। তাতে আরো লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবো। স্থানীয় পাইকাররা বলেন, ফল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে খুচরা বিক্রি করা হয়। ২০০ টাকা কেজি দরে বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি ক্রয় করি। বাইরের জেলা থেকে কিনলে খরচ বেশি হয়। এখানকার ফলগুলো আমাদের জেলায় বেশি উৎপন্ন হলে আমাদের ও লাভ। গত বছর থেকেই এ ফল চাষে আনোয়ার লাভবান। আমিও আগামী বছর চাষ করবো। অল্প সময়ে স্বল্প খরচে দামি এই ফল চাষে লাভবান হওয়া যায়। তাই জায়গা তৈরি করে কাজ শুরু করবো। ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার দৈনিক বলেন, দেশে ফলটি সাম্মাম হিসাবে পরিচিতি পেলেও এটা রকমেলন বা হানিডিউমেলন ফল। সাম্মাম বা রকমেলন জাতীয় ফলগুলো জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। পানি আটকে থাকলে গাছের গোড়া পচে গাছ মারা যায়। তাই মরুভূমিতেই আবাদ হয়। তবে গারো পাহাড়ের মাটির বিশেষ গুণ হচ্ছে, পানি আটকে না। তাই সাম্মাম বা রকমেলন ফলগুলো চাষ ও ফলন ভাল হচ্ছে। অনেক কৃষকই এই বিদেশি ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভূঁইয়া বলেন, আনোয়ার হোসেন একজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি পরীক্ষামূলকভাবে রকমেলন চাষ করে সফল হয়েছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ তার বাগান নিরাপদ রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা করা করেছে। তার ফল চাষ দেখে আশপাশের অনেকেই রকমেলন চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এই ফলের চাষে লোকসানেরও ভয় নেই।