শেরপুর গারো পাহাড়ে হাতির সংখ্যা বাড়ছে

শেরপুর সংবাদদাতা ; শেরপুর গারো পাহাড়ে বাড়ছে হাতির সংখ্যা। এখানে গত এক বছরে প্রায় অর্ধশত হাতি শাবকের জন্ম হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে দিন দিন হাতির সংখ্যা বাড়ছে বলে বন বিভাগের একটি সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশ থেকে এশিয়ান প্রজাতির হাতির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং বিলুপ্তের পথে চলে আসছে বলে হাতি গবেষকরা জানালেও শেরপুরে আশার আলো জেগেছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার মধ্যরাতে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি রেঞ্জ অফিসের পেছনের জঙ্গলে একটি হাতির শাবকের জন্ম হয়। এর দুই তিন মাস আগেও এই জঙ্গলে আরো কয়েকটি হাতি শাবকের জন্ম হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকায় হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এতে করে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি চলছে হাতি হত্যাও। স্থানীয় কৃষকরা তাদের ফসল বাঁচাতে জমির চারপাশে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে রাখেন যেন হাতির এসে ফসলের ক্ষতি করতে না পারে। কিন্তু এতে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা পড়ছে বুনোহাতি। সর্বশেষ ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ অঞ্চলের বুনোহাতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুর জেলার গারো পাহাড় এলাকায় হাতি কর্তৃক মানুষ মারা পড়েছে ৪৩ জন। এরমধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ১০ জন, জামালপুর জেলায় ৩ জন, নেত্রকোনা জেলায় ৫ জন এবং শেরপুর জেলায় সর্বোচ্চ ২৫ জন। অপরদিকে মানুষ কর্তৃক হাতি হত্যা হয়েছে জামালপুর জেলায় ৩টি, নেত্রকোনা জেলায় ২টি এবং সর্বোচ্চ শেরপুর জেলায় ২৭ টি হাতি। মানুষ মারা গেলে সরকার থেকে বন বিভাগের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। কিন্তু হাতি মারা গেলে বা হত্যা করা হলে এতদিন কোনো আইনি ব্যবস্থাপন করা হয়নি। তবে সর্বশেষ ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর শ্রীবরদী উপজেলায় এবং চলতি বছরের ১ নভেম্বর নালিতাবাড়ী উপজেলায় মাত্র দু’টি হাতি হত্যার অভিযোগে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৩৬(১)/ ৪১ ধারা অনুযায়ী পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে। যেভাবে হাতি হত্যা চলছে তাতে দেশ থেকে এশিয়ান হাতির প্রজাতি শিগগিরই বিলুপ্তি হয়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বন্যপ্রাণী গবেষকরা। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এমনটাই মনে করছেন । তবে আশার কথা শুনিয়েছেন শেরপুরের বন বিভাগ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ। বুনোহাতির বৃদ্ধির বিষয়ে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া বলেন, এই রেঞ্জে বেশ কিছু এলাকায় গভীর বন থাকায় এখানে প্রায় তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে হাতির দল বিচরণ করে আসছে। এই তিনটি দলে ৩০ থেকে ৩৫টি করে হাতি রয়েছে। সেই সাথে প্রতিটা দলে ৭টি থেকে ৮টি হাতি শাবক দেখা যায়। গত শুক্রবার মধ্যরাতে রাতে বালিজুরি রেঞ্জ অফিসের পাশেই জন্ম নেওয়া হাতির শাবকটি এখন সুস্থ আছে এবং দলবদ্ধ হয়ে মা হাতির সাথে বনের ভেতরে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। তিনি আরো জানান, সম্প্রতি বন বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ সভায় হাতি রক্ষায় এবং জানমালের ক্ষতি রক্ষায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের কারণে সাধারণ মানুষ হাতির উপর আক্রমণ থেকে বিরত থাকছে। সেই সাথে তাদের ফসল বাঁচাতেও হাতির উপর হামলা না চালিয়ে বন বিভাগের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি কিছুদিন যাবত এই অঞ্চলে হাতি মানুষের অনেকটাই সহ অবস্থান ফিরে এসেছে। এ বিষয়ে শেরপুর বিভাগীয় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, শেরপুরে হাতির সংখ্যা বাড়ছে এটা নিঃসন্দেহে সঠিক তথ্য। এখানের প্রতিটি দলেই বিভিন্ন বয়সের হাতির শাবক দেখা যাচ্ছে। গত ৪-৫ দিন আগে আমাদের ড্রোন ক্যামেরায় বনের ভিতর ৩৪ সদস্যের একটি হাতির দলে ৮ থেকে ১০ টি শাবক দেখা গেছে। অর্থাৎ ২৪ টি হাতির সাথে ১০ টি হাতি শাবক । আমাদের এই অঞ্চলে হাতির আবাসস্থল এবং খাদ্য সংকট কমে আসার কারণেই দিন দিন হাতির সংখ্যা বাড়ছে বলে আমরা মনে করি। যদিও চার বছর অন্তর হাতি প্রসব করেন। তিনি আরো বলেন, হাতি রক্ষায় আমরা ২০১৪ সাল থেকেই শেরপুরের তিনটি রেঞ্জ এলাকায় ৫শ হেক্টর জমিতে হাতির খাদ্য বান্ধব গাছ রোপন করা হয়েছে।