নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ২৮ মে রাতে জেলে রিপন (৫৫) হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন প্রধান আসামি ভগিনীপতি জামাল উদ্দিন মাঝিকে জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে চরজব্বার থানায় সোপর্দ করেছে র্যাব-১১। গ্রেফতারের পর শ্যালককে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন জামাল উদ্দিন।
গ্রেফতার জামাল উদ্দিন মাঝি (৪০) উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চরমাকছেমুল গ্রামের মো. মোস্তফা সওদাগরের ছেলে।
শনিবার রাতে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-১১, সিপিসি-৩, নোয়াখালী কোম্পানি কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী পুলিশ সুপার মো. গোলাম মোর্শেদ। এর আগে শুক্রবার ৩১ মে জেলার বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা এলাকা থেকে জামাল উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।
গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার চরমাকছেমুল গ্রামের নিহতের বাড়ির পাশে মেঘনা নদীসংলগ্ন এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বুধবার লাশ সন্দ্বীপ থানাধীন উরিরচর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মো. রিপন (৫২) উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চরমাকছেমুল গ্রামের মৃত মো. হাবিব উল্ল্যার ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ মে নিজ বাড়ি থেকে বিকালে রিপন স্থানীয় সিডিএসপি বাজারে মাছ বিক্রি করতে যায়। পরেরদিন সকালেও রিপন আর বাড়ি ফেরেননি। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পর সকালে বাড়ির পাশে সড়কে তার ব্যবহৃত জুতা ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে দেখেন। সড়কের নিচে জমাটবাধা রক্ত ও দাঁত এবং এক টুকরা হাড়সদৃশ পেলে তাদের সন্দেহ হয়। তখন পরিবারের লোকজন থানায় খবর দেন। রিপনের নিখোঁজের পর থেকে সন্দেহভাজন রিপনের ভগিনীপতি জামাল উদ্দিন পলাতক ছিলেন।
জামাল উদ্দিনের স্ত্রী (নিহতের বোন) মরিয়ম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমার ভাই রিপনের সঙ্গে পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। ঘটনার রাতে জামাল বাড়ি ফিরে ভেজা জামা কাপড়ে। এ সময় তার লুঙ্গিতে রক্ত লেগে থাকতে দেখা যায়। এরপর জামাল ভোরবেলায় কাজের জন্য চট্টগ্রাম যাচ্ছে বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
র্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে জামাল জানান, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার স্ত্রী এবং স্ত্রীর বড় ভাই ভিকটিম রিপনের সঙ্গে তার বিরোধ চলে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ২৮ মে রাত ১১টার দিকে একটি লোহার রড নিয়ে উপজেলার শিউলী একরাম বাজার থেকে দক্ষিণে বেলাল কোম্পানি মসজিদের পাশে অন্ধকারে আড়ালে ওতপেতে থাকে। একপর্যায়ে ভিকটিম ঘটনাস্থলে পৌঁছলে জামাল তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করলে ভিকটিম রাস্তায় পড়ে যান। তখন বাজার থেকে কিছু পথচারী ঘটনাস্থলের রাস্তা দিয়ে আসতে দেখে ভিকটিমকে টেনে রাস্তার পাশে ডোবার পানিতে ফেলে দিয়ে আসামি জামাল বাড়িতে চলে যায়।
তিনি বলেন, বাড়িতে এসে তার পরিহিত জামা কাপড় পরিবর্তন করে রাত দেড়টার দিকে পুনরায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে রিপনের মৃত্যু নিশ্চিত দেখে লাশটি কাঁধে নিয়ে মেঘনা নদীর কিনারায় ফেলে দেয়। পরে তার স্ত্রীকে বিশেষ প্রয়োজনে চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
চরজব্বার থানার ওসি কাওসার আলম ভূঁইয়া জানান, এ ঘটনায় নিহতের ছেলে আরমান হোসেন বাদী হয়ে চরজব্বর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকে আসামি পলাতক ছিল। র্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে আসামিকে গ্রেফতার করে। আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কথা স্বীকার করেছে। তাকে দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।