কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন নিউ মার্কেট থানা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল হাসান ফাহাদ। তার দাবি, আন্দোলনকারীদের গুলিতে তিনি আহত হয়েছেন।
সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহীদুল্লাহ হলের সামনে গুলিবিদ্ধ হন ফাহাদ। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।
গুলিবিদ্ধ সাজেদুল হাসান ফাহাদ বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর কোটাবিরোধীরা নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারই প্রতিবাদে আজকে আমাদের একটি প্রোগ্রাম ছিল। আমরা খবর পেলাম আমাদের কিছু সহকর্মীকে শহীদুল্লাহ হলে আটকে রাখার। খবর পেয়ে শহীদুল্লাহ হলের কাছাকাছি চলে এলে কোটাবিরোধীদের একজন কোমর থেকে পিস্তল বের করে খুব কাছ থেকে আমার বাম পায়ের রানে গুলি করে। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে সেখানেও তারা আমাদের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। হাসপাতালের আনসার সদস্যরা এই হামলা থেকে আমাদের রক্ষা করে।
তিনি আরও বলেন, আমার বাম পায়ের গুলিটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বের করা হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, নিউ মার্কেট থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল হাসান ফাহাদ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এলে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার শেষে তাকে ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের ৯ নম্বর বেডে ভর্তি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গতকাল চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাতে প্রথমে রোকেয়া হলের মেয়ে শিক্ষার্থীরা হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে আসেন। তারা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার বিক্ষোভ শেষে হলে ফিরে যান তারা।
একই সময়ে মধ্যরাতে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
একই ইস্যুতে আজ সোমবারও উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। দুপুরের দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে এসে অবস্থান নেন কয়েকশ আন্দোলনকারী। এসময় তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে নানা স্লোগান দেন। তবে তাদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলাদা অনুষ্ঠানে তাদের স্লোগানের ভাষার তীব্র সমালোচনা করেন।
এরপর ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয় ছাত্রলীগ। দুপুর ২টার দিকে তারা বিজয় ৭১ হলসহ বিভিন্ন হলে আন্দোলনকারীদের বাধা দেন। এ খবরে আন্দোলনকারীরা ছুটে গেলে ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। উভয়পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর থেকে গোটা ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বিকেল ৪টার পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এসময় ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠি-সোটা নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। বহু আন্দোলনকারীকে পিটিয়ে আহত করে তারা। তাদের অনেকের মাথা ফেটে যায়। আন্দোলনকারীরা কোথাও কোথাও প্রতিরোধের চেষ্টা করে। ফলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।
বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের অধিকাংশই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া আশপাশের অন্যান্য হাসপাতালেও গেছেন কেউ কেউ।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও বিকেল থেকে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে অনেকে আহত হন। এছাড়া সোমবার বিকেলে আন্দোলনে নামেন রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন।