অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ কোটার অবতারণা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে না পারা, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা প্রকাশ করতে না পারা ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারাসহ অনেক ব্যর্থতা রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের।
সোমবার (৩ মার্চ) দুপুর সোয়া ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদেরও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ কোটা প্রদানের বিরোধিতা করে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আমরা মনে করি এই কোটা প্রথা চালুর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে৷ বর্তমান সরকার রাষ্ট্র সংস্কার, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ, শহীদ ও আহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা, আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, দেশের প্রতিটি সেক্টরকে স্বৈরাচার মুক্ত করাসহ সকল বিষয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে পারেনি। মানুষের এখন নিরাপত্তা নেই। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সব ব্যর্থতা ধামাচাপা দিতে একই কোটার অবতারণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ২০১৮ সাল থেকে সারা দেশে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছি। যার ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটার বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বর্তমান সরকার আবারও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোটা পুনর্বহাল করা হয়েছে। আমরা চাই এই কোটা প্রথা বাতিল করা হোক। অন্যথায় ছাত্র অধিকার পরিষদ তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে।
সংবাদ সম্মেলনে এর আগে বক্তব্য রাখেন ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি আহ্বায়ক সানাউল্লাহ হক, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব রাকিবুল হাসানসহ আরও অনেকে।
সানাউল্লাহ হক বলেন, যেই কোটার কারণে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, আমরা চাই না কোটার কারণে বর্তমান সরকারের অধঃপতন না হয়। শেখ হাসিনা যে খেলায় ব্যর্থ হয়েছে আমরা চাই না আপনারা আবার সে খেলায় ব্যর্থ হোন৷ আপনারা মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কাজে মনোযোগ দিন। মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপনারা সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করুন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, কোটার পরিবর্তে আহত-শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করুন কিন্তু কোটা প্রথা ফিরিয়ে আনবেন না। আমরা মনে করি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ কোটা প্রদান অভ্যুত্থানে কোটার বিরুদ্ধে রক্ত দেওয়া শহীদদের সাথে বেঈমানি করা। জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের বীরেরা যে কোটার বিরুদ্ধে রক্ত দিয়েছে সেই কোটাকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করছি। যারা পুনরায় বৈষম্যকে ফিরিয়ে আনতে চায়, যারা নিজেদের চেতনাকে লালন করে কোটা প্রথাকে ফিরিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ তাদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দাঁড়াবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অফিসে আদেশে বলা হয়, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদেরও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে। তবে, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে এই আসনে ভর্তি করতে হবে। কোনো অবস্থায় আসন শূন্য রাখা যাবে না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই আদেশ বাস্তবায়নের জন্য রোববার সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে।