বর্ণাঢ্য ও ব্যতিক্রমী আয়োজনে উদ্বোধন হয়ে গেল প্যারিস অলিম্পিকের। প্রথমবারের মতো অলিম্পিক গেমসের মূল ভেন্যুর বাইরে নদীতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে ব্যতিক্রমী এক কাণ্ড ঘটিয়েছেন আলজেরিয়ান অ্যাথলেটরা। তাদের জাহাজ প্যারেডে অংশ নেওয়ার সময় তারা সিন নদীতে গোলাপ ফুল ছুড়ে মারেন। এর মধ্য দিয়ে ১৯৬১ সালে প্যারিসে ঘটা গণহত্যায় নিহতদের স্মরণ করেন আলজেরিয়ানরা।
আফ্রিকান অ্যাথলেটদের বোট ভাগাভাগি করেন আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, আলবেনিয়া ও জার্মানি থেকে ২০২৪ অলিম্পিকে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিরা। সেই বোট থেকেই গোলাপ ছুড়ে মারা হয় সিন নদীতে। এই ঘটনার পেছনে জড়িয়ে আছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা। যা ঘটেছে ১৯৬১ সালের ১৭ অক্টোবরে এই সিন নদীতে, যেখানে আলজেরিয়ার মানুষকে ডুবিয়ে হত্যা করা বা হত্যা করে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ঔপনিবেশিক ফ্রান্সের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে আলজেরিয়ান অলিম্পিক কমিটি এক বার্তায় জানিয়েছে, ‘আমাদের অধিকার আদায়ের লক্ষে শহীদ হওয়ার হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে অলিম্পিকের উদ্বোধনীতে সিন নদীতে আলজেরিয়ার প্রতিনিধি ফুল নিক্ষেপ করেছে। বিশেষ করে সেই ব্রিজ থেকে আমরা তাদের স্মরণ করেছি যেখানে তারা শহীদ হয়েছিল, সৃষ্টিকর্তা তাদের ক্ষমা করুন।’
সিন নদীতে ঘটে যাওয়া সেই বর্ণনা নিচে আমরা অলোচনা করব। তার আগে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের মতো মঞ্চে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার ব্যাপারে নিয়ম কী বলে, তা জেনে নেওয়া যাক। আলজেরিয়া তাদের নাগরিকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি লালন করে আসছে ৬৩ বছর ধরে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির নিয়ম অনুযায়ী– যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক বার্তা প্রদান বা প্রদর্শন ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ থাকবে, যতক্ষণ তা হবে শান্তিপূর্ণ।
১৯৬১ সালে প্যারিসে কী ঘটেছিল?
দীর্ঘ ১৩২ বছর ফরাসি শাসনের অধীনে ছিল আলজেরিয়া। পরবর্তীতে তারা ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের ঠিক আগে ১৯৬১ সালে ১৭ অক্টোবর প্যারিসে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। ইতিহাসবিদদের বয়ান অনুযায়ী, প্যারিস এলাকায় আলজেরিয়ার মানুষদের ওপর যে দমনমূলক কারফিউ দেওয়া হয়েছিল, সেটার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল আলজেরিয়ার মুক্তিকামী সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের ফরাসি শাখা।
-Le con qui ose tout (@leconquiosetou1) July 26, 2024
সেই বিক্ষোভে কমপক্ষে ১২০ জন আলজেরিয়ানের মৃত্যু হয়েছিল বলে ইতিহাসবিদরা বলে আসছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১২,০০০’র বেশি বিক্ষোভকারীকে। কারও কারও মতে, তাদের মধ্য থেকেও তিন শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। ইতিহাসবিদরা বলছেন, অভিযোগ রয়েছে সেদিন অনেক বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে সিন নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তাদের কাউকে আবার আহত অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল নদীর ঠাণ্ডা পানিতে।
সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘আলজেরিয়ার মুসলিম কর্মী’ ও ‘আলজেরিয়ান ফরাসি মুসলিম’-দের ‘টার্গেট’ করে যে কারফিউ চালু হয়েছিল, সেটার বিরুদ্ধেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। তারপরই এই গণহত্যার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার বিষয়ে ফরাসি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিৃবতি না দিলেও, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো সাম্প্রতিক সময়ে সেটিকে ‘ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছেন।